সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের আমানত ফেরত স্কিম চূড়ান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ এএম
একীভূত হওয়া সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই স্কিমের মাধ্যমে প্রথম ধাপে একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন, যা দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে। যাদের আমানত দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) গভর্নর আহসান এইচ. মানসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এতে চার ডেপুটি গভর্নর, পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন ব্যাংক থেকে অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও ডাটাবেজ তৈরি হয়নি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ হয়নি। এতে আইনি জটিলতা তৈরি হলেও গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যেই ফেরত প্রক্রিয়া শুরু করতে।
বৈঠকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করার পাশাপাশি স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
স্কিম অনুযায়ী উত্তোলনসীমা
যাদের হিসাবে ২ লাখ টাকা বা কম রয়েছে, তারা স্কিম কার্যকর হওয়ার পর একবারেই পুরো টাকা তুলতে পারবেন।
২ লাখ টাকার বেশি জমা থাকলে প্রতি তিন মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন, মেয়াদ দুই বছর।
৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহক বা ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীরা প্রয়োজনে যেকোনো পরিমাণ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন ব্যাংকটি কাঠামোগতভাবে স্থিতিশীল। তাই আতঙ্কে সবাইকে টাকা তুলতেই হবে এমন নয়। স্কিমের লক্ষ্য আস্থা ফেরানো এবং ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
স্কিমের সুবিধা পেতে যা লাগবে
- জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে খোলা বৈধ হিসাব
- এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও সুবিধা পাওয়া যাবে মাত্র একটি হিসাব থেকে
- পাঁচ ব্যাংকে আলাদা হিসাব থাকলে প্রতিটি হিসাবের বিপরীতে আলাদা করে টাকা পাওয়া যাবে
- যাদের ঋণ বকেয়া রয়েছে, ঋণ সমন্বয়ের আগে উত্তোলন সম্ভব নয়
গত সরকার আমলে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপের জালিয়াতির কারণে বহু ব্যাংক বিপুল ঋণখেলাপির মুখে পড়ে। সংকটে থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে তৈরি করা হয়েছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। ব্যাংকগুলো হলো: এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি দিচ্ছে সরকার এবং ১৫ হাজার কোটি আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। অনুমোদিত মূলধন ৪০ হাজার কোটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে আছে প্রায় ৭৫ লাখ গ্রাহকের ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার আমানত। বিপরীতে ঋণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি, যার বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি।
দেশব্যাপী এসব ব্যাংকের রয়েছে ৭৬০ শাখা, ৬৯৮ উপশাখা, ৫১১ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও ৯৭৫টি এটিএম বুথ। একীভূত হওয়ার পর একই এলাকায় একাধিক শাখা একত্র করা হবে। পরিচালন ব্যয় কমাতে কর্মীদের বেতন–ভাতা ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক অফিস নেওয়া হয়েছে মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় খোলা হয়েছে একটি চলতি হিসাবও। শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। ৫ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগ ও শেয়ার শূন্য ঘোষণার পর ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হয়।



