কিটক্যাট ও চিনির মান নিয়ে অভিযোগ
নেসলে ও মেঘনা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
দেশে নিম্নমানের খাদ্যপণ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাত করার অভিযোগে নেসলে বাংলাদেশ ও মেঘনা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার নিরাপদ খাদ্য আদালত। সোমবার স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথী পৃথক দুটি মামলায় এই আদেশ দেন। মামলার বাদী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম মামলায় নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, নেসলে বাজারজাত করা কিটক্যাট চকলেট-কোটেড ওয়েফার বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি গবেষণাগারের পরীক্ষায় পণ্যে উল্লেখযোগ্য মানগত ঘাটতি পাওয়া যায়।
পরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়েফারে অনুমোদিত সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বিপরীতে অ্যাসিডিটি পাওয়া গেছে ২ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা পচনের ইঙ্গিত বহন করে। চকলেট আবরণে দুধের কঠিন পদার্থ (মিল্ক সলিডস) থাকা উচিত ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, সেখানে পাওয়া গেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে দুধের ফ্যাট থাকা উচিত ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই ফলাফল অনুযায়ী পণ্যটি দুগ্ধজাত দাবি করলেও দুধের উপস্থিতি মানদণ্ডের নিচে।
পরিদর্শক কামরুল জানান, উচ্চ অ্যাসিডিটি পচন নির্দেশ করে এবং কম দুধের উপস্থিতি মানে দুগ্ধজাত পণ্যে দুধের প্রকৃত উপস্থিতি নেই। এসব পরীক্ষা সরকারি খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, কিটক্যাট পণ্যের জন্য বিএসটিআই আলাদা মানদণ্ড তৈরি করেনি এবং চকলেট বিস্কুটের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তারা এনওসি দিয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও দুবাই থেকে আমদানিকৃত প্রতিটি চালান বিসিএসআইআর পরীক্ষা করার পরই কাস্টমস ছাড়পত্র দেয়।
তিনি বলেন, ‘নেসলে পণ্যে গড়বড়ের সুযোগ নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো অফিসিয়াল যোগাযোগ ছাড়াই মামলা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর।’
আরেক মামলায় মেঘনা সুগার রিফাইনারির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ‘সালফার ডাই-অক্সাইডযুক্ত নিম্নমানের চিনি’বা নিম্নমানের চিনি উৎপাদনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অভিযোগে বলা হয়েছে, পরীক্ষা করা নমুনায় ন্যূনতম অনুমোদিত ৯৯ দশমিক ৭০ শতাংশের বিপরীতে সুক্রোজ পাওয়া গেছে ৭৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া সালফার ডাই-অক্সাইড পাওয়া গেছে ০ দশমিক ০৮ পিপিএম, যেখানে বিএসটিআই মানদণ্ড অনুযায়ী চিনিতে সালফারের কোনো উপস্থিতি থাকা উচিত নয়।
খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান জানান, সালফার ডাই-অক্সাইড কৃত্রিমভাবে চিনি সাদা করতে ব্যবহৃত একটি ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ। সুক্রোজের কম মাত্রা মানে চিনির বদলে ‘কৃত্রিম মিষ্টিকারক’ ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জনসংযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলার তথ্য জানানো হলেও পরবর্তীতে তিনি আর মন্তব্য দেননি।



