Logo
Logo
×

অর্থনীতি

তারল্য সংকটে একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে বড় ছাড়

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪০ এএম

তারল্য সংকটে একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে বড় ছাড়

একীভূতকরণ প্রক্রিয়াধীন শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের তীব্র তারল্য সংকট মোকাবিলায় বিশেষ ছাড়মূলক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নির্দেশে ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব থেকে প্রি-ফাইন্যান্স, রিফাইন্যান্স ও বিশেষ তহবিলের আদায়কৃত অর্থ কেটে নেওয়ার বাধ্যতামূলক নিয়ম অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য—ব্যাংকগুলোর তাৎক্ষণিক নগদ প্রবাহ সচল রাখা এবং একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন রিফাইন্যান্স, প্রি-ফাইন্যান্স ও আবর্তিত তহবিল থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে বিশেষ প্রকল্পভিত্তিক অর্থায়ন ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এসব ঋণের অর্থ আদায় শুরু হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দিতে হতো। কিন্তু তীব্র তারল্য ঘাটতির কারণে এ কর্তন তাদের দৈনন্দিন লেনদেনকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছিল। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

এখন একীভূত হওয়ার পথে থাকা পাঁচ ব্যাংক হলো—এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ৫ নভেম্বর তাদের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের পাশাপাশি ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে রিফাইন্যান্স বা প্রি-ফাইন্যান্সের অর্থ কেটে রাখলে তারা স্বাভাবিক লেনদেন পরিচালনাও করতে পারতো না। প্রশাসকদের সুপারিশের ভিত্তিতে গভর্নর এই ছাড় দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত ঋণ পোর্টফোলিও প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা হলেও আমানত রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা—যা মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ। ব্যাংকভেদে খেলাপির হার আরও চরম: ইউনিয়ন ব্যাংকে ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীতে ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীতে ৬২.৩ শতাংশ, এবং এক্সিম ব্যাংকে ৪৮.২০ শতাংশ।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে তারল্য সংকট কমাতে সহায়তা করবে। তবে একীভূত ব্যাংকের টেকসই আর্থিক কাঠামো গঠনে প্রশাসকদের এখন বড় দায়িত্ব—সম্পদ ও দায়ের সঠিক ও স্বচ্ছ হিসাব চূড়ান্ত করা।

সরকার ইতোমধ্যে নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন কাঠামো অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকারি অর্থায়নে এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ শেয়ার হিসেবে দেওয়া হবে আমানতকারীদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকটি চালু হলে এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। গভর্নর সরাসরি পুরো একীভূতকরণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক আমানতকারী এখনো জমা অর্থ তুলতে পারছেন না। রিফাইন্যান্স–প্রি-ফাইন্যান্স তহবিলের আদায়কৃত টাকা কর্তন বন্ধ থাকলে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ প্রবাহ বাড়বে, ফলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া সহজ হবে এবং আস্থাও ধীরে ধীরে ফিরবে। একই সঙ্গে প্রশাসকদের পুনর্গঠনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন