রাজধানীর বাজারগুলোতে আগাম শীতের সবজির দাম এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। বেগুন, শিম, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মতো সবজি মোকামে বিক্রি হলেও ঢাকায় এসে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা পরিবহন ও পাইকারি খরচের যুক্তি দেখাচ্ছেন, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বাজার এখনো সিন্ডিকেটের কবলে, যা ভাঙতে না পারলে সাধারণ ভোক্তাদের দুঃশ্বাস অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীর টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. হাবিব বলেন, সবুজ গোল বেগুন ১৪০ টাকা কেজি, তাল বেগুন ২০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা। মুলা বিক্রি করছি ৫০–৬০ টাকায়। এর কমে বিক্রি করা যায় না। অথচ একই বেগুন বগুড়ার মহাস্থান বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এবং মুলা মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউন হল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা আগাম শীতের সবজি আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে রাখছেন। তবে দাম রয়ে গেছে উঁচুতেই। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০–৬০ টাকায়, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজিতে।
পাইকারি পর্যায়েও দাম কম নয়। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. সুজন ও মো. সেলিম বলেন, পাইকারিতে শিম ৭০–৮০ টাকা, বেগুন ৮০–১২০ টাকা, মুলা ৫০–৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০–২০০ টাকা, ফুলকপি ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০–২০ টাকা লাভ রাখতে হয়।
কিন্তু উত্তরাঞ্চলের মোকামগুলোতে একই সবজির দাম অনেক কম। বগুড়ার মহাস্থান বাজারে গতকাল বেগুনের পাইকারি দাম ছিল ৪০–৫০ টাকা, ফুলকপি ৫৫–৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, শিম ৬০ টাকা এবং মুলা মাত্র ৮–১০ টাকা কেজি। খুচরায় এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে। পরিবহন খরচ হিসাবেও কেজিপ্রতি গড়ে ৩ থেকে ৪ টাকার বেশি নয়।
দক্ষিণাঞ্চলেও একই চিত্র। যশোরের সাতমাইল হাটের বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম জানান, আগের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। শিম ৩৫ টাকা, বেগুন ৫০–৬০ টাকা, মুলা ৮–১০ টাকা, ফুলকপি ৭০–৭৫ টাকা, বাঁধাকপি ৫৫–৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০–১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় ১০–৩০ টাকা বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, ঢাকায় প্রতি কেজি সবজির পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে ৮ থেকে ১০ টাকার বেশি নয়। খুচরায় ১০–২০ টাকা বাড়তে পারে, কিন্তু দ্বিগুণ দাম হওয়ার কারণ নেই। বাজারে মেমো প্রথা চালু করা গেলে বোঝা যাবে কে বেশি লাভ করছে। তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সবজির সরবরাহ বাড়বে, তখন দামও কমবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজার এখনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সরকার মেমো প্রথা বাস্তবায়ন করলে ও পূর্বাচলে কৃষক মার্কেট চালু হলে ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন।



