Logo
Logo
×

অর্থনীতি

বেনজিরের ক্যাশিয়ার জসিম এস আলমের টাকা তুলতে দৌড়ঝাপ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম

বেনজিরের ক্যাশিয়ার জসিম এস আলমের টাকা তুলতে দৌড়ঝাপ

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোপালবাগের ২৩/৫ নম্বর আবাসিক ভবনের তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটে ঝুলছে 'টপ টেন ট্রেডিং হাউস' নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। কিন্তু বাস্তবে ওই ফ্ল্যাটে দুই বছর ধরে কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম বা প্রতিষ্ঠানের কোন ব্যক্তির উপস্থিতি নেই। তবু সেই ভুয়া ঠিকানার আড়ালে ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় খোলা মো. আলমাছ আলীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে কিছু টাকা তোলা হলেও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে মোট ৫৪৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ অলস পড়ে আছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত টাকার মালিকের এক বছর ধরে কোনো হদিস নেই। এ বিষয়ে ব্যাংক পাঁচবার নোটিশ দিলেও এ সময়ে তিনি একবারও হাজির হননি।

ব্যাংকের অভিযান ও রহস্য উন্মোচন

নব গঠিত ইসলামী ব্যাংক এবার হিসাবের রহস্য উন্মোচন শুরু করেছে। ভুয়া ঠিকানার আড়ালে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে তারা সাপের মতো প্যাঁচানো তথ্য পেয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক খান জানান, হিসাবটি মূলত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এস আলম ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৮৮ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন। হিসাব খোলার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের টাকা টপ টেন ট্রেডিং হাউসে জমা হয়েছে। কাগজপত্রে সব লেনদেন সরবরাহকারীর অর্থ প্রদানের নামে দেখানো হয়েছে। ব্যাংক হিসাব জব্দ করে ঋণের টাকা সমন্বয় করতে সর্বোচ্চ আইনি লড়াই চালাচ্ছে।

তবে বিপরীতমুখী চেষ্টাও দেখা দিয়েছে। পাঁচবার নোটিশ দিলেও মালিক ব্যাংকে হাজির না হওয়ায় এই বিপুল টাকা তুলে নেওয়ার জন্য এখন ব্যাংকের শাখা থেকে প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত ঘুরঘুর করছে একাধিক অসাধু চক্র। অভিযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের লোকজন এবং পতিত সরকারের দোসররা।

টপ টেন ট্রেডিং হাউস'-এর হিসাব ১৩ এপ্রিল ২০২৩ সালে খোলা হয়। স্বত্বাধিকারী মো. আলমাছ আলী। ব্যাংকের ঠিকানা হিসেবে গোপালবাগের ফ্ল্যাটটি দুই বছর ধরে কোনো কার্যকর অফিস নয়। নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, প্রতি মাসে ফ্ল্যাটভাড়া আসে; কিন্তু কাউকে সেখানে বাসবাস বা অফিস করতে দেখা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক জামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, আলমাছ আলীর নামে হিসাব খোলা হলেও খোলার দিন শাখায় উপস্থিত ছিলেন মূলত এস আলমের লুটপাটের প্রধান সহযোগী ও ব্যাংকের তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন। সেই দিনের পর থেকে আলমাছ আলী একবারও ব্যাংকে হাজির হননি। এই হিসাব থেকে যাঁরা টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন, তাঁরা সবই এস আলম ও আকিজ উদ্দিনের পেইড এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, এটি কোনো সাধারণ অনুপস্থিতি নয়-এটি কাগজ-কলমের মালিকানা; কিন্তু প্রকৃত মালিক অদৃশ্য। উদ্দেশ্য লুটপাটের নকশা বাস্তবায়ন। যেখানে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারাও

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে আলমাছ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর বাবা আব্দুর রশীদ। স্থায়ী ঠিকানা ঢাকার সবুজবাগ, পূর্ব মাদারটেক, ২০/৮।

টাকা উত্তোলনের চেষ্টা: সক্রিয় চক্র

অ্যাকাউন্টধারী অনুপস্থিত হলেও টাকা হাতানোর চেষ্টা থেমে নেই; বরং তীব্র হাচ্ছে। ব্যাংক সূত্র বলছে, দুই ধরনের শক্তি চেক সক্রিয়-একদিকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দল ও তার লোকজন, অন্যদিকে পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের শরিক ও সম্মিলিত চক্র। অভিযোগ রয়েছে, দুদকের এক সহকারী পরিচালক অ্যাকাউন্টধারীর পক্ষে নগদায়নের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে যোগাযোগ করেছেন। ব্যাংকের বাইরে থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ ও চাপ সৃষ্টি করেছেন জসিম উদ্দিন নামের ব্যক্তি, যিনি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির আহমেদের 'ক্যাশিয়ার' হিসেবে পরিচিত। তাঁরা প্রথমে দেখিয়েছেন 'বাণিজ্যিক পাওনা', প্রত্যাখ্যান হলে ক্ষমতা-ভয়ভীতি দেখিয়ে শেষে কমিশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বলেন, 'টপ টেন ও আলমাছ আলীর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রজেক্ট ফাইন্যান্স নিয়ে ইসলামী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কারও টাকা উদ্ধারের জন্য কোনো কর্মকর্তা বা ফোনে যোগাযোগ করিনি।'

ইতিমধ্যেই এনবিআরও হস্তক্ষেপ করেছে। এ-বিষয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে-'টপ টেন ট্রেডিং হাউস'-এর নামে ১ হাজার ১৮ কোটি টাকার রাজস্ব বকেয়া আছে, যা ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। এরপর এনবিআরের পরিচয়ে একটি দল শাখায় গিয়েও এই টাকা তোলার চেষ্টা করেছে।

অবশ্য এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন বলেন, নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান 'টপ টেন'। ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন হিসেবে 'সরবরাহকারী' উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটি কোনো ব্যবসা করেনি। কার্যালয়টিও বন্ধ। ২০২১ সালে ইস্যু হওয়া একটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দাবির পেছনে অসাধু চক্রের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

মামলা ও আইনি লড়াই নামে-বেনামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ব্যাংকঋণ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে টপ টেন ট্রেডিং হাউসের বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম মামলা করেছে (নম্বর ২০/২০২৫)। মামলায় স্বত্বাধিকারী আলমাছ আলী, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম মাসুদ, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. মনুিরুল মাওলা, ডিএমডি আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ ৯ জন বিবাদী। একই মামলায় ২৩ আগস্ট হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয় দুদক।

সরকার পরিবর্তনের পর ২৫ আগষ্ট ২০২৪-এ বিএফআইইউ হিসাব ফ্রিজ রাখার নির্দেশ দেয়। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ২০২৫ দুদকও একই নির্দেশ দেন। ১৪ জুলাই ২০২৫ ঢাকার মেট্রোপলিটন জ্যেষ্ঠ স্পেশাল জজ আদালত হিসাব আনফ্রিজড করার আদেশ দেন।

আনফ্রিজের সুযোগে নগদায়নের চেষ্টা বেড়ে যায়। ব্যাংক উচ্চ আদালতে রিট করে। শেষে ২৩ আগস্ট ২০২৫ আবারও হিসাব ফ্রিজ রাখা হয়। পুরো ফ্রিজ-আনফ্রিজ প্রক্রিয়া দেখিয়েছে-আইনি আদেশ, শর্তাবলি এবং আবেদন না দেখালে বাজারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সূত্র : আজকের পত্রিকা

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন