স্বস্তি ফিরলেও উদ্বেগ কাটেনি শুল্ক স্থগিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করার দিনেই বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময়ের মধ্যে দেশগুলোকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। তবে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন এ সিদ্ধান্তের বাইরে রয়েছে। বরং চীনের জন্য শুল্কহার ১০৪ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন তিনি।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প হঠাৎ করেই অর্ধশতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্কারোপ করেন। এর ফলে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। এতে আগে থেকে জারি থাকা ১৫ শতাংশের সঙ্গে নতুন ৩৭ শতাংশ যুক্ত হয়ে শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে। তবে তিন মাসের এই বিরতিকে বাংলাদেশ ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময়কে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে শুল্ক কমানো এবং আমদানি বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে। বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, চীন শুল্কের মুখে পড়ায় আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই সময়ের দরকষাকষির কার্যকারিতার ওপর।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক মাধ্যম এক্সে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, আমরা আপনার বাণিজ্যনীতির সমর্থনে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। অনেক পোশাক কারখানার মালিকও সাময়িক স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, তবে আশঙ্কা রয়েছে—৯০ দিন পর শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা ১০৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক বাজারের ৯ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে রেখেছে বাংলাদেশ, যা দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক করেছে। শুধু ২০২৪ সালেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বহাল থাকলে বাংলাদেশের পণ্যের দাম বাড়বে এবং চাহিদা কমতে পারে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকার তিন মাস সময় পেয়েছে। ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক কমানো যায় এবং আমদানি বাড়ানো যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন মনে করেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি। বাংলাদেশ চাইলেই পাল্টা নীতি নিতে পারবে না, আলোচনার মাধ্যমেই এগোতে হবে।
আইএনএফের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, তিন মাসের সময়টা কাজে লাগিয়ে এখনই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, এখন তা আরও জোরদার করতে হবে।



