টানা তিন বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ পাচ্ছে না সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৮ এএম
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। ফলে টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে কোনো ঋণ পাচ্ছে না সরকার। উল্টো আগের বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধে কোষাগার থেকে অর্থ দিতে হচ্ছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ঋণাত্মক ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বিনিয়োগের চেয়ে গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধের খাতে বেশি অর্থ গিয়েছে। এর আগের দুই অর্থবছরেও একই চিত্র ছিল—২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ ধনাত্মক বিক্রি হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে (১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা)।
গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস টানা সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল। একক মাসে সর্বোচ্চ ঘাটতি দেখা যায় জানুয়ারিতে (৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা)। জুনেও ১৬৯ কোটি টাকার ঘাটতি হয়।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ ১২.৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে ছয় মাস না যেতেই, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে ফের সুদের হার কমিয়ে সর্বোচ্চ ১১.৯৮ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় কমে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংক আমানত ও সরকারি বিল-বন্ডে সুদের হার বাড়ায় অনেক বিনিয়োগ সেখানে চলে গেছে। এছাড়া কড়াকড়ির কারণে সম্পদশালীরাও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বেশি অর্থ জমা রাখছে ব্যাংকে, তারপর নিরাপত্তা ও মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে।



