এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীরব বিপ্লব, গ্রামীণ অর্থনীতিতে রেকর্ড অগ্রগতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে একসময় ধারণা করা হয়েছিল, ডিজিটাল ব্যাংকিং আসায় এজেন্ট ব্যাংকিং হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। দেশের প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং ঘটিয়েছে এক নীরব বিপ্লব।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছে। ব্যাংকের শাখা ছাড়াই লেনদেনের সুবিধা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে এটি গড়ে তুলেছে নতুন ব্যাংকিং সংস্কৃতি। গত এক বছরে গ্রাহক সংখ্যা, আমানত, লেনদেন, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় সংগ্রহ—সব সূচকেই ভাঙা হয়েছে অতীতের রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার। এক বছরে তা বেড়ে ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজারে। অর্থাৎ এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭২ হাজার (৫.৯৫%)।
ঋণ বিতরণ বেড়েছে আরও চমকপ্রদ হারে। ২০২৪ সালের জুনে যেখানে ঋণ বিতরণ ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের জুনে তা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা (৫৪.৭৮%)।
প্রবাসী আয়েও রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, যা এক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকায়। বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা (১৬.১৫%)।
অমানতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জুনে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, যা এক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকায়।
তবে এ সময়ে এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এক বছরে এজেন্ট কমেছে ৬১৮টি, দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৩-এ। আউটলেট কমেছে ৯১৬টি, দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৭৭-এ।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, নতুন সেবা যেমন বিমা সুবিধা যুক্ত হলে এজেন্ট ব্যাংকিং আরও সম্প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে–জুন প্রান্তিকে প্রবাসী আয় বিতরণে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক (৫৫.০৮%), দ্বিতীয় ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং তৃতীয় ব্যাংক এশিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং শুধু পরিসংখ্যানের সাফল্য নয়, এটি দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা নিশ্চিত করেছে।
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, এজেন্ট ব্যাংকিং এখন গ্রামীণ জনগণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠছে, বিশেষ করে প্রবাসী আয় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে।



