এসআইবিএলকে রুগ্ন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভুত না করার দাবি
শামসুল আলম সেতু
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্রের মুখে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির নিয়ন্ত্রন নেওয়া এস আলম গ্রুপের হাত থেকে বর্তমানে মুক্ত হলেও আর্থিক সংকটের কারণে চরম দুর্দশায় পতিত হয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংক একীভুতকরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকদূর এগিয়েছে। যে কোন সময় একটি ঘোষণা আসতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত না করে তার জন্য একটি প্রতিবাদ করা হয়।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক মেজর ড.রেজাউল হক (অব:) বলেছেন,সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) পিএলসিকে কতিপয় রুগ্ন ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভুতকরণ না করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন।
তিনি বলেন,শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এস.আলম নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই ৪ স্বতন্ত্র পরিচালক ও মাত্র একজন উদ্যোক্তা পরিচালক এর সমন্বয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে, যা ছিল ব্যাংকটিকে আর্থিক দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাড়ানোর জন্য একটি অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে উদ্দ্যেক্তা পরিচালককে পাশ কাটিয়ে একজন অনভিজ্ঞ স্বতন্ত্র পরিচালককে চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত করা হয় যা ব্যাংকটির জন্য ছিল একটি বাস্তব বর্হিভূত অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন,আপনারা জেনে অবাক হবেন যে,অনেক উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডাদের পরিচালক হওয়ার যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্বেও এবং বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে তাদের যুক্ত করার জন্য বারংবার অনুরোধ করা হলেও বর্তমান অনভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ অর্থ্যাৎ স্বতন্ত্র পরিচালক (যারা ব্যাংকের কোন শেয়ার ধারণ করতে পারবেনা) ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আমলে নেয়নি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ফলে প্রকৃত উদ্দোক্তাগণের উপর ব্যাংকের পরিচালনার কার্যভার অর্পিত না হওয়ায় গ্রাহকরা অনাস্থার কারণে ব্যাংক থেকে তাদের ডিপোজিট তুলে নেয়ার প্রবনতা দেখা দেয়। কিন্তু ডিপোজিট করার কোন প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় না,যা ব্যাংকের দুরবস্থাকে আরও ঘনীভূত করেছে।
তিনি বলেন,যার প্রকৃষ্ঠ ফলাফল হল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যথেষ্ঠ অর্থের যোগান দেয়া সত্বেও ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যাদেরকে পরিচালনা পর্ষদের দ্বায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা কেউই কোন ব্যাংক পরিচালনার সাথে পূর্বে যুক্ত ছিল না কিংবা ব্যাংকের পরিচালনার বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞ নন।
ব্যাংকটিকে একীভূতকরন না করে পরিচালনার দ্বায়িত্ব যদি প্রকৃত উদ্যোক্তা ও এর শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ন্যাস্ত করা হয়,তাহলে খুব দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগীতায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক তার গ্রাহকের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং ব্যাংকের আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে ঘুরে দাড়াবে এবং বাণিজ্যিক ভাবে পুনরায় একটি লাভজনক ও সফল ব্যাংকে রুপান্তরিত হবে বলে তিনি জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন,আমরা আশ্বাস দিচ্ছি যে,আগামীতে ব্যাংকটি প্রকৃত উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রনে আসলে মাইক্রো-ফাইনান্স, মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ এবং এসএমই বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে কতিপয় রুগ্ন ব্যাংকের সঙ্গে অযৌক্তিকভাবে একীভূত না করে বর্তমান অনভিজ্ঞ পর্ষদ বাতিল করে প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের পাশাপাশি প্রয়োজনে কিছু দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগকারীকে পরিচালনা পর্ষদে সম্পৃক্ত করে ব্যাংকটিকে যুক্তিযুক্ত উপায়ে প্রকৃত অর্থে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়াটাই হবে সময় উপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি ব্যাংকটাকে উদ্দ্যেক্তা শেয়ারহোল্ডার ও প্রকৃত শেয়ারহোল্ডারদের হাতে তুলে দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, জাবেদুল আলম চৌধুরী,আব্দুর রহমান, আরশাদ মোহাম্মদ চৌধুরী, ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ব্যাংকের অগ্রগতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক সৌদি আরবের পবিত্র ম্ক্কা নগরীতে শাখা খোলার জন্য অনুমোাদন প্রদান করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই অনুমোদন পত্রটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকটি গত ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর সেভাবে শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।



