আর্থিক খাত ‘আইসিইউ থেকে কেবিন হয়ে বাড়ি ফিরেছে’: অর্থ উপদেষ্টা
শামসুল আলম সেতু
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১২ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে দেশের আর্থিক খাত ‘অনেকটাই’ ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাত আইসিইউ থেকে কেবিনে ফিরেছে। এরপর এখন আমরা কেবিন থেকে বাড়িতে ফিরেছি।
‘এমনকি এটা বলা যায় যে, দেশের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও বক্তব্য রাখেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। রাজনীতি, ব্যবসা, ব্যাংক ও মিডিয়ায় এক ধরনের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে উঠেছিল, যা বৈষম্য ও দুর্নীতিকে উসকে দিয়েছে।
‘রাজনীতিবিদ কেউ এমপি হয়েছেন, কেউ হয়েছেন ব্যাংকের মালিক, কেউ আবার টেলিভিশন কিংবা মিডিয়ার মালিক হয়েছেন। ফলে পুরো সিস্টেম ছিল অনিয়ন্ত্রিত এবং স্বজনপ্রীতিতে পূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্য, দুর্নীতি ও সিস্টেমের ধ্বংস— এই তিনটি বিষয় আমাদের অর্থনীতি ও সমাজকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এসব কারণে সাধারণ উদ্যোক্তা, যুব সমাজ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি উন্নয়নের সঠিক সুযোগ পায়নি।’
বর্তমান সরকার ও অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন চেষ্টা করছি সেসব বাধা দূর করতে। গত ১৫ বছরের জমে থাকা জগদ্দল পাথর সরানোর চেষ্টায় আছি। যদিও সংস্কার সহজ নয়, তবুও শুরুটা করতে হয়েছে আমাদেরকেই।’
‘সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে, এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা, যা ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।’
জুলাই আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীরা পাশে ছিল না
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় দেশের বুদ্ধিজীবীদের পাশে পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে যখন জনতা যোগ দিয়েছে, তখন কোনো সরকার বাংলাদেশে টিকতে পারে নাই, পারবেও না। এটা ধ্রুব সত্য। তাই এখান থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে।’
গভর্নর বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের সময় দেশের বুদ্ধিজীবীদের পাশে পাওয়া যায়নি। ৬৯ ও ৭১ সালে পেলেও এ আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। এ আন্দোলনে তারা দুই ভাগ হয়ে দলাদলি করেছে।’
গভর্নর আরও বলেন, আমি আশা করব অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংককে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড় করানোর।
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামাতে হবে; বর্তমানে ৮ শতাংশের বেশি রয়েছে। আমরা অনেকগুলো সংস্কার সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সবাই যদি পারে, আমরা কেন পারব না।”
গভর্নর বলেন, সরকার ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট গ্রহণ করবে ও বাস্তবায়ন করবে। এসব সংস্কার করতে পারলে আর্থিক খাতের চিত্র বদলাতে বাধ্য। এগুলোর মাধ্যমে দেশকে আমরা একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব।



