
প্রিন্ট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০০ এএম
কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি : এনবিআর চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন,কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায় দেশের দুর্নীতি । রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিফলন সঠিকভাবে না হলে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটি বলেন।
তিনি বলেন,আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা আমাদের সমন্বিত ব্যর্থতা। এই অনিয়মের সুযোগে প্রকৃত করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন,বর্তমান যুগে পণ্যের প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে জানা খুব সহজ। অথচ ব্যাংক ও কাস্টমস যদি ঋণপত্র খোলার সময় যাচাই-বাছাই করে, তাহলে অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে জবাবদিহিতা ও সুশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,বাংলাদেশে কর শিক্ষার ঘাটতি আছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। যদি নাগরিক পর্যায়ে কর সম্পর্কে সচেতনতা না বাড়ে, তাহলে করবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলা যাবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, কর আদায়ের তুলনায় সরকারের কর অব্যাহতির পরিমাণ অনেক বেশি, যা রাজস্ব ঘাটতির একটি বড় কারণ। এনবিআর এখন এমন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে, যার ফলে সরকার নির্বিচারে কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। কেবল জাতীয় সংসদের অর্থবিলের মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
কর প্রশাসনে সংস্কার এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন,বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণে কর প্রশাসনে জবাবদিহিতা বাড়ছে এবং আইনগত সংস্কারের পথ সহজ হচ্ছে।
ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘রাজস্ব বিভাগ ও কর প্রশাসনের বিভাজন নিয়ে যেসব আন্দোলন হয়েছিল তা এখন বন্ধ হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছে। তবে বিভাজনের ফলে রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেন উচ্চপদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অডিটের নামে ঘুষ বাণিজ্য করদাতাদের আস্থার বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যবস্থার সংস্কার না হলে রাজস্ব আহরণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাবে না।’
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে ৭টি সুপারিশ করেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। যার মধ্যে রয়েছেÑ করজাল বাড়িয়ে আদায় সহজ করা ও পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন, প্রস্তাবিত রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে সবাইকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া, আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যাতে উচ্চতর পদে যেতে বাধা তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা, কেইস টু কেইস ভিত্তিতে কর অব্যাহতির সুযোগ বন্ধ করা, শুল্ক ফাঁকি বন্ধে প্রকৃত মূল্যে আমদানি নিশ্চিত করা, করভীতি দূর করে করবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও করের টাকার সঠিক ব্যবহার করা।
ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিক দল বিজয়ী হয়। তারা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজকে পরাজিত করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিতার্কিকদের মাঝে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়।
এ প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, দৌলত আক্তার মালা ও আবুল কাশেম।