সেপ্টেম্বর থেকে ফের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ছে
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
ছবি - সংগৃহীত
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ফের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। বিভিন্ন অজুহাতে এই তাই চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকডা। চার্জ বাড়ানোর ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছে আমদানিকারকরা।
তিন বছরের মাথায় আবারও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়াতে যাচ্ছে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো। যন্ত্রপাতি আমদানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ পরিচালন ব্যয় বেড়েছে দাবি করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস (বিকডা)।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আয়ের সঙ্গে পরিচালন ব্যয় মেলাতে পারছি না। শ্রমিক ব্যয় প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বেড়েছে। পরিবহন খরচ বাড়ছে প্রায় ১০০ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকারও অবমূল্যায়ন হয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেবার মান বজায় রাখতে চার্জ সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকডা। আমরা চিঠি দিয়ে স্টেকহোল্ডারদের বিষয়টি অবহিত করেছি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে।
বর্ধিত এই চার্জ কার্যকর হলে বেসরকারি ডিপোতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ক্ষেত্রভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়বে খরচ। বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন আমদানি-রপ্তানিরকারক এবং নৌ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপের কারণে দেশের রপ্তানি খাত এমনিতে বিপর্যস্ত। এই সময়ে যদি দেশীয় স্টেক হোল্ডারগুলো চার্জ বাড়িয়ে দেন, তাহলে সংকট আরও বাড়বে।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ২৩ শতাংশ চার্জ বাড়ায় বিকডা। তখন জ্বালানি তেলের বৃদ্ধিতে খরচ বেড়েছে দাবি করে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। এর তিন বছরের মাথায় এখন আবার চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।
বিকডার তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি পণ্যের ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বর্তমানে প্যাকেজ (স্টাফিং থেকে বন্দরে ডিসপাস পর্যন্ত) চার্জ হচ্ছে ৬ হাজার ১৮৭ টাকা। সেখানে চার্জ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা। এই হিসাবে ব্যয় বাড়বে ৩ হাজার ৭১৩ টাকা, প্রায় ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা। চার্জ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এই হিসাবে ব্যয় বাড়বে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা, প্রায় ৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০ ফুটের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এখন গ্রাউন্ড চার্জ ১১৫ টাকা, সেটি বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৫০ টাকা। ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গ্রাউন্ড চার্জ ২৩০ টাকা, সেটি বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এখন ল্যান্ডিং চার্জ প্রতি টন ২০৭টাকা। সেটি এখন করা হচ্ছে ২৭০ টাকা।
বিকডার কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপের কারণে দেশের রপ্তানি খাত এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। এই সময়ে বেসরকারি ডিপোগুলো চার্জ বাড়িয়ে দিলে সেটি পণ্য রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে চার্জ বেড়ে গেলে আমদানিতে খরচ বেড়ে যাবে। যেটি সর্বশেষ গিয়ে পড়বে পণ্যের দামে। বাজারে বেড়ে যাবে আমদানি পণ্যের দাম।
বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, পরিচালন ব্যয় বাড়ার কারণে বিকডা চার্জ বাড়াতে চায়। কিন্তু তারা এটি এক তরফাভাবে বাড়াতে পারে না। চার্জ বাড়াতে হলে বিকডার উচিত ছিল, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাড়ানো। কিন্তু তারা সেটি করেনি।



