
প্রিন্ট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম
টেকনাফ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি তিন মাস বন্ধ, পচে যাচ্ছে পণ্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১০:২২ এএম

ছবি - টেকনাফ স্থলবন্দরে নষ্ট হওয়া পণ্য
তিন মাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে শত শত ট্রাকভর্তি রপ্তানি পণ্য বন্দর এলাকায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
এই স্থবিরতা কবে কাটবে কেউ জানে না। ফলে বন্দরের দিনমজুর, ট্রাকচালক, খালাসিরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। টেকনাফ থেকে গুটিয়ে অনেকে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা চালু করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবশেষ চলতি বছরের গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে একটি কাঠের বোট আসে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলছেন, “তিন মাস ধরে বন্দর অচল থাকায় আমদানি পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ক্ষতির মুখে পড়েছে মায়ানমারে রপ্তানির জন্য বন্দরে মজুদ করা ২২ হাজার ৮৫০ ব্যাগ সিমেন্ট, দুই হাজার ৭০০ বস্তা আলু, এক হাজার ৯০ বস্তা সফট ড্রিংকসসহ বিভিন্ন পণ্য। “দীর্ঘদিন ধরে মজুদ থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে এসব পণ্যের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
সরজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দরের আশপাশে নিস্তব্ধতা। যে বন্দরে প্রতিদিন পণ্য ওঠানামার কোলাহল, ট্রাকের লম্বা সারি আর শ্রমিকদের ব্যস্ততা দেখা যেত সেখানে পুরো ফাঁকা পড়ে আছে। তালাবদ্ধ গোডাউনের সব দরজা। নাফ নদীর জেটিতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার কিংবা জাহাজ। সেখানে ছাগল আর হাঁস পালন হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে দুই হাজার ৭০০ বস্তা আলু, ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, এক হাজার ৯০ বস্তা কোমল পানীয় রয়েছে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত রয়েছে। এরই মধ্যে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক হাজার বস্তা সিমেন্টও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে।
বন্দরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মিয়ানমারে রপ্তানির জন্য মজুত করা কোটি কোটি টাকার সিমেন্ট ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কি কারণে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হলো জানেন না তারা। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শতাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক। ‘আরাকান আর্মির সম্মতি না পাওয়ায়’ পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না জানিয়ে আমদানিকারক এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “মিয়ানমার থেকেও কোনো পণ্য টেকনাফ স্থলবন্দরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
“বন্দরের গোডাউনে সিমেন্ট, আলু ও কিছু অন্য খাদ্যপণ্য রয়েছে। সেগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” তিনি বলেন, “এতে বন্দরের শতাধিক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। এখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চালু করতে সরকারি হস্তক্ষেপ দরকার।” বন্দরের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “বন্দরের কিছু মালামাল আটকে ছিল। আলু ছিল ১৫ গাড়ি। সবগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের সামনে ২০টির বেশি দোকান সবসময় সরগরম থাকত বন্দর শ্রমিকদের হাঁকডাকে। কিন্তু এখন পুরো চিত্রই ভিন্ন। বন্দরের শ্রমিক না থাকায় বন্ধ হয়েছে অনেক দোকান। নেই শ্রমিকদের কোলাহল। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধের কারণে আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে অন্তত দেড় হাজার শ্রমিকের।
টেকনাফ বন্দরের শ্রমিক সর্দার আলম বলেন, “টেকনাফ স্থলবন্দরে দেড় হাজার শ্রমিক আছে। চার-পাঁচ মাস ধরে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা সবাই বেকার। অর্থাভাবে পরিবার নিয়ে সবাই কষ্টে আছে।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, বন্দরে ২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪০ কোটি টাকা, ২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০৪ কোটি টাকা ও ২৪-২৫ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু গেল তিন মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে কোনো রাজস্ব আসেনি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা বলেন, “বিদেশী যে অর্থ উপার্জন হয় তার মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরও একটি। কোনো ধরনের আলোচনার মাধ্যমে যদি এ সমস্যার সমাধান হতে পারে, তা হলে ব্যবসায়ীরা বাঁচবে। পণ্যগুলো রপ্তানি হবে টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে।”
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, “বন্দরকে সচল করার জন্য বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষসহ আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলার সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে।
“তবে এরই মধ্যে রপ্তানি করা আলু পচে গেছে। এ ছাড়া সিমেন্টও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”