Logo
Logo
×

অর্থনীতি

জাহাজভাঙা শিল্প : রডের কাঁচামালের বড় উৎস

Icon

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:০২ এএম

জাহাজভাঙা শিল্প : রডের কাঁচামালের বড় উৎস

ছবি - সংগৃহীত

ইস্পাতশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, রড তৈরির জন্য সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচামাল পাওয়া যায় জাহাজভাঙা শিল্প থেকে; কিন্তু পুরনো জাহাজের আমদানি কমে যাওয়ায় এই উৎস থেকে ভালো মানের কাঁচামালের জোগানও কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইস্পাতশিল্পনির্ভর তামা, পিতল ও দস্তার মতো পণ্যের পুনঃ রপ্তানি, হালকা প্রকৌশল, ছোট নৌযান তৈরি ও পুরনো আসবাবের মতো খাতেও কর্মচাঞ্চল্য কমছে।


রড তৈরির কারখানা ও জাহাজভাঙা শিল্পদুই খাতেই ব্যবসা রয়েছে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের। গ্রুপটির পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প থেকে রডের কাঁচামাল, পুনর্ব্যহারযোগ্য যন্ত্রপাতি, নৌযান তৈরির প্লেট, পাইপসহ যা পাওয়া যায়, তা উৎকৃষ্টমানের। কারণ, এসব পণ্য আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়। এই উৎস সংকুচিত হয়ে গেলে এসব পণ্যের আমদানিনির্ভরতা বাড়বে, তাতে খরচও বাড়বেছোটমাঝারি আকারের হালকা প্রকৌশল খাতের বিস্তারও বাধাগ্রস্ত হবে


৮০ থেকে নেমে এল সাতে

জাহাজভাঙা শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, একটি পুরনো জাহাজ ভাঙার পর ওই জাহাজের মোট ওজনের ১৫ থেকে ২৫ বা গড়ে ২০ শতাংশ লোহার টুকরা পাওয়া যায়এসব লোহার টুকরা স্বয়ংক্রিয় কারখানায় রডের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়এর বাইরে গড়ে ৩০ শতাংশ লোহার প্লেট পাওয়া যায়, যা সনাতনপদ্ধতির কারখানায় রড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়সব মিলিয়ে পুরনো জাহাজের মোট ওজনের কমবেশি ৫০ শতাংশ লোহার টুকরাপ্লেট রড তৈরির কারখানায় ব্যবহার করা হয়এর বাইরে পুরনো জাহাজের বাকি পণ্য পুনর্ব্যবহার, পুনঃ রপ্তানি, নৌযান তৈরি, হালকা প্রকৌশলসহ নানা খাতে ব্যবহৃত হয়।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৪০৫ অর্থবছরে মোট ১০ লাখ ৪৪ হাজার টন পুরনো জাহাজ আমদানি করা হয়। সেই হিসাবে ওই অর্থবছরে আমদানি হওয়া জাহাজ কেটে পাওয়া যায় প্রায় ৫ লাখ ২২ হাজার টন লোহার টুকরা ও প্লেট। একই সময়ে সরাসরি পুরনো লোহার টুকরা আমদানি করা হয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার টন। অর্থাৎ রডের মোট কাঁচামালের ৮০ শতাংশের জোগান এসেছিল পুরনো জাহাজ থেকে।


এক দশক পর ২০১৪১৫ অর্থবছরে পুরনো জাহাজভাঙা শিল্প থেকে রডের কাঁচামালের জোগান আরও কমে আসে। এ সময় জাহাজভাঙা থেকে রড তৈরির কাঁচামাল মিলেছে ৬৪ শতাংশ। আর দুই দশক পর এই হারও ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। যেমন গত অর্থবছরে প্রায় ৮ লাখ ৪৫ হাজার টন ওজনের পুরনো জাহাজ আমদানি করা হয়, যেখান থেকে পাওয়া যায় রড তৈরির ৪ লাখ ২২ হাজার টন কাঁচামাল। একই সময়ে পুরনো লোহার টুকরা আমদানি হয় ৫২ লাখ ৬৮ হাজার টন। সেই হিসাবে রড তৈরির কাঁচামালের ৭ শতাংশ সরবরাহ হয়েছে জাহাজভাঙা কারখানা থেকে। আর সরাসরি আমদানি হয়েছে ৯৩ শতাংশ কাঁচামাল।


পুরনো জাহাজের আমদানি কেন কমে গেল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪০৫ অর্থবছর থেকে একটানা ১৮ বছর পুরনো জাহাজের আমদানি কখনো ১০ লাখ টনের নিচে নামেনি। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২২৩ অর্থবছরে প্রথম হোঁচট খায় এই খাত। আগের অর্থবছরের তুলনায় ওই অর্থবছরে আমদানি ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৭১ হাজার টনে। আর সর্বশেষ সদ্য বিদায়ী ২০২৪২৫ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮ লাখ ৪৫ হাজার টন ওজনের ১০৫টি জাহাজ, যা গত ২১ বছরে সবচেয়ে কম।


পুরনো জাহাজ আমদানি ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ার জন্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। এগুলো হলো রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের পর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, জাহাজভাঙা শিল্পে অর্থায়ন সংকুচিত হয়ে পড়া এবং হংকং কনভেনশন অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পকে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে না পারা


জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ডের মহাপরিচালক এএসএম শফিউল আলম তালুকদার বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠান গ্রিন ইয়ার্ড বা পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে সনদ পেয়েছে। হংকং কনভেনশন বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন শুধু সনদধারী প্রতিষ্ঠানগুলোই জাহাজ আমদানি করতে পারবে। গত জুনে এই সময়সীমা শেষ হয়।


করণীয় কী

পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার প্রথম স্বীকৃতি পায় পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জাহাজভাঙা শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠনটিতে ১১৪ সদস্য রয়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব কারখানা মাত্র ১৩টি। এখন যেহেতু পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ না থাকলে আমদানির সুযোগ নেই, ফলে যারা পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য সরকারের নীতিসহায়তা দরকার। তাহলে নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব কারখানা যুক্ত হবে এই শিল্পে। তাতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়বে।


Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন