
প্রিন্ট: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
মোংলা বন্দর : লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মুনাফা

বাগেরহাট প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

ছবি - সংগৃহীত
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল। জাহাজ আসা, কার্গো হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয়, নিট মুনাফাসহ সব ক্ষেত্রেই সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে বন্দরটি। ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আসায় এ সফলতা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ আসার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি। অর্থবছরটিতে বন্দরে ৮৩০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ দশমিক ৮০ লাখ টন। বন্দরে ১০৪.১২ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি ১৫ দশমিক ৩২ লাখ টন এবং ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়।
গত অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, এ অর্থবছরে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৫৬ টিইইউজ এবং ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।
গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। এ ছাড়াও বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ২০৩ শতাংশ বেশি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেছেন, বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেকহোল্ডার, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ীকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় এই অর্জন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠন করার ফলে জাহাজ আসা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোংলা বন্দরে এখন জাহাজজট নেই। দ্রুত কনটেইনার খালাস হচ্ছে। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পর্যাপ্ত কনটেইনার রাখার জন্য সাতটি টি কনটেইনার ইয়ার্ড রয়েছে। টাগবোট, পাইলট বোট, মুরিং বোট, পাইলট ডেসপাস বোট, সার্ভে বোট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ বন্দরে ৩৮টি সহায়ক জলযান রয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইএসপিএস কোড যথাযথ অনুসরণ করার পাশাপাশি বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল বিদ্যমান। এ ছাড়াও এ বন্দর থেকে নিরাপদে কম খরচে সড়ক ও নৌপথে সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৪৪ কিলোমিটার বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে দিবারাত্রি নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯টি পয়েন্টে বার্দিং সুবিধাও রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব বিষয় মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বাড়ার পাশাপাশি গত অর্থবছরে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
বর্তমানে মোংলা বন্দর দিয়ে প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ফ্রেশ ফুড, সাধারণ পণ্য, জিপসাম, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠের লগ, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার, পাম অয়েল, ফ্লুড অয়েল, ফ্লাই অ্যাশ, আয়রন, অয়েল সিড, স্টিল পাইপ, চিটাগুড় ইত্যাদি।
মোংলা বন্দরের মাধ্যমে প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে গার্মেন্টস পণ্য, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকনা মাছ, ক্লে, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটনইয়ার্ন, হিমায়িত খাদ্য, সাধারণ পণ্য ইত্যাদি।