
প্রিন্ট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪ এএম
ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা চট্টগ্রাম থেকেই আত্মপ্রকাশ করেছে : ফারুক ই আজম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০৫ এএম

ছবি : সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক, বলেছেন—বিশ্ব সভ্যতার বুকে একটি নতুন মানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা চট্টগ্রাম থেকেই আত্মপ্রকাশ করেছে। এই চেতনার জন্মস্থল হিসেবে চট্টগ্রাম আজ শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাইরে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক মডেল হিসেবে এটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে, যা আজ একাডেমিক পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম কলেজে অনুষ্ঠিত ৭ম ইকনোমিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৫, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডের চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, মাইক্রোইকোনোমিক্স, সামাজিক ব্যবসা (Social Business), এবং সমস্যা সমাধানভিত্তিক ব্যবসা (Problem Solving Business) এর ধারণাগুলোর প্রারম্ভিক ধারা চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হয়েছে। এখান থেকেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা বিকশিত হয়ে বিশ্বজুড়ে "Banking for the Poor" ও মাইক্রোক্রেডিট নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে "সামাজিক ব্যবসা" ধারণাটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত জামানতনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে "Trust-based Banking" ধারণাটি চট্টগ্রাম থেকেই উৎসারিত হয়েছে, যেখানে মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয় মানুষের প্রতি আস্থা। এই ধারণা শুধু আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে নয়, মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অর্থনীতির প্রসারেও অনন্য ভূমিকা রেখেছে। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নোবেল পুরস্কার অর্জন করে।
ফারুক ই আজম বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে আমরা এক অভিনব বিকল্প উপস্থাপন করেছি—যেখানে ব্যক্তিগত মুনাফার বদলে সমাজকল্যাণকেই ব্যবসার মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সামাজিক ব্যবসার এই ধারা অর্থনৈতিক সাম্য ও মানবিক উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হতে পারে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের ভূমিকা ও অবদানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে এই সকল ধারণার ব্র্যান্ডিং চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হওয়া উচিত। আমাদের তরুণ অর্থনীতিবিদদের উচিত এই মডেলগুলো নিয়ে কাজ করে নতুন জ্ঞান ও ভাবনা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া।
শেষে তিনি বলেন, ইকনোমিক্স অলিম্পিয়াড শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটি প্ল্যাটফর্ম—যেখানে তরুণরা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, নীতিনির্ধারণ, বাজেট বিশ্লেষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে প্রস্তুত হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, এই প্রজন্ম শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানেই নয়, বাস্তব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতেও সক্ষম হয়ে উঠবে।