
প্রিন্ট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
‘লাখ ইয়াবা সহ আটক আকরাম’ টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার অভিযোগ

কক্সবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

ছবি : লাখ ইয়াবা সহ আটক আকরাম
চেকপোস্টে মোটরসাইকেল না থামিয়ে দ্রুতগতিতে পালানোর সময় ১ লাখ ইয়াবা সহ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তর শাখার ৬ নম্বর সাংগঠণিক ওয়ার্ডের যুবদলের আহবায়ক মোহাম্মদ আকরাম (২৯) কে আটক করেছে বিজিবি। এনিয়ে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। আর জেলাবাসীর সমালেচনার মুখে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে ওই যুবদল নেতাকে।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাতারাতি যুবদল নেতা হন এই আকরাম। প্রতিবাদ করায় স্থগিত করেছে ইউনিয়ন শাখার কমিটিও। ইতিমধ্যে কিভাবে একজন ইয়াবাকারবারী কার বা কাদের ছত্রছায়ায় যুবদলে ঢুকেছে তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা যুবদল।
আটক যুবদল নেতা মোহাম্মদ আকরাম (২৯), টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ হ্নীলার বাসিন্দা মো. রবিউল হোছেনের ছেলে।
উখিয়াস্থ ৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হোয়াইক্যং বিওপির বিশেষ টহলদল উখিয়া থেকে টেকনাফগামী একটি মোটরসাইকেল চেকপোস্টের নিকট আসলে, কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যগণ মেইন রোডে ব্লক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মোটরসাইকেল আরোহী থামানোর পরিবর্তে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া সময় কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা পিছনে বাঁশ দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে আরোহী পড়ে যায়। পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল আকরামের কাছে রক্ষিত ব্যাগে বায়ুরোধী প্লাস্টিকের ট্যাপ দ্বারা প্যাচানো ১ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। আসামীর বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর মোহাম্মদ আকরামকে হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তর শাখা যু্বদলের আওতাধীন সাংগঠনিক ৬ নং ওয়ার্ডের আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়।
হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তর শাখা যুবদলের আহবায়ক মো. হারুন উর রশিদ ও সদস্য সচিব আবদুল্লাহ বিন কাদের স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ রাসেল, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম পন্টি, মোহাম্মদ আমিন, সাঈদ হোসেন,সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন টিপু রয়েছেন। তবে মোটা অংকের টাকার বিনিমিয়ে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোহাম্মদ কাইয়ুম ইয়াবা কারবারী আকরামকে কমিটি দিয়েছেন বলে দাবী করেছেন ইউনিয়ন যুবদলের উত্তর শাখার আহবায়ক ও সদস্য সচিব ।
এবিষয়ে ইউনিয়ন যুবদলের উত্তর শখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ বিন কাদের বলেন, আকরাম চিহ্নিত মাদক কারবারী। তাকে প্রথমে ইউনিয়ন কমিটিতে দিতে চেয়েছিলেন উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোহাম্মদ কাইয়ুম। কিন্তু আমাদের জোরালো প্রতিবাদের কারনে ব্যর্থ হন। পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উপজেলা যু্বদলের আহবায়ক কাইয়ূম আমাদেরকে বাধ্য করেন কমিটি দিতে। এনিয়ে আমরা পরে প্রতিবাদ জানালে উত্তর শাখা কমিটি স্থগিত করা হয়। এবিষয়ে সুবিচার পেতে আমরা জেলা যুবদলের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
একই কমিটির আহবায়ক মো. হারুন উর রশিদ বলেন, আকরাম চিহ্নিত অস্ত্র ও মাদক কারবারী। তাকে কমিটি দিতে বহুবার আমাদেরকে নানাভাবে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক নির্দেশনা দেন। কিন্তু আমরা সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করায় গেল ৬ অক্টোবর যুব সমাবেশের মাইকিং বন্ধ করে দেয় উপজেলা আহবায়কের অনুসারী উত্তর শাখার দুই যুগ্ন আহবায়ক চিহ্নিত সন্ত্রাসী জামাল হোসেন ও মামুন সিকদার। আকরামকে আহবায়ক করে কমিটি না দিলে যুব সমাবেশ বন্ধের হুমকি দেন তাঁরা। তখন আমরা বাধ্য হয়ে কমিটি অনুমোদন দেই। পরে এটা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের কমিটিই স্থগিত করে দেয় উপজেলা।
এদিকে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোহাম্মদ কাইয়ুমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল বলেন, ইয়াবা সহ আটকের পর আকরামকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আকরামকে বহিষ্কার করেই আমরা থেমে থাকছিনা।
তিনি আরো বলেন, আকরাম ৫ আগষ্টের পরে দলে ঢুকেছি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আকরামের বিষয়ে আগে থেকেই নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও এই ছেলে কিভাবে আহবায়ক পদ পেলে, কারা এর সাথে জড়িত, তাদেরকে চিহ্নিত করতে তদন্ত করা হচ্ছে। উপজলা হোক বা ইউনিয়ন হোক যারাই আকরামকে যুবদলে ঢুকিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।