
প্রিন্ট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪ এএম
বগুড়ায় যমুনার চরে প্রতিটি ঘরেই কুরবানির দেশী গরু

বগুড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

ছবি : বগুড়ায় যমুনার চরে প্রতিটি ঘরেই কুরবানির দেশী গরু
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বগুড়ার যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ চরজুড়ে চলছে কুরবানির দেশি গরু প্রস্তুতের ব্যস্ততা। প্রতিটি বাড়ির উঠানেই দেখা মিলছে দুটি থেকে শুরু করে দশটি কিংবা তারও বেশি গরুর। একচালা টিনের ঘরের নিচে কিংবা গাছের সঙ্গে বাঁধা সারিসারি এসব গরুর যত্নে এখন চরজুড়ে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে।
চরে এখন কেবলই কুরবানির গরুর পরিচর্যার দৃশ্য। কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছেন যমুনা নদীতে গোসল করাতে, কেউ বৈদ্যুতিক মোটরের পানি দিয়ে গরুকে পরিষ্কার করছেন, আবার কেউ মাঠে ঘাস সংগ্রহে ব্যস্ত। চারণভূমির সবুজ প্রান্তরে গরুর ঘাস খাওয়ার মনোরম দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। এসব গরুর দেখাশোনার মূল দায়িত্ব পালন করছেন বাড়ির গৃহবধূরা। গৃহকর্তারা মাঠ থেকে ঘাস এনে দেন। দেশি এসব গরুর খাবার মূলত সবুজ ঘাস, সামান্য খুদ, কুঁড়া ও ভুসি।
স্থানীয়দের মতে, চরাঞ্চলে গরু লালন-পালনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় তারা দীর্ঘদিন ধরেই কুরবানির আগে দেশি গরু পালন করে আসছেন এবং এতে লাভবানও হচ্ছেন।
বগুড়ার কাজলা কুড়িপাড়া চরে গিয়ে দেখা যায়, মৃত সিরাজ বেপারির ছেলে সিদ্দিক বেপারির (৪৫) গরু চরজুড়ে সবচেয়ে বড় হিসেবে পরিচিত। কয়েকদিন আগেই একাধিক পাইকার তার গরুর দাম হাঁকিয়েছেন ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে সিদ্দিক জানান, ৩.৫ লাখ টাকা হলে গরুটি বিক্রি করবেন। গত বছর কুরবানির ঈদের পর তিনি দেড় লাখ টাকায় গরুটি কিনেছিলেন। নিজের সন্তানের মতো করেই গরুটির যত্ন নিচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন মোটরের পানি দিয়ে গোসল করানো ছাড়াও কুরবানির মৌসুমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে গরুটিকে শ্যাম্পু দিয়েও গোসল করাচ্ছেন। এ গরুটি ছাড়াও তার গোয়ালে আরও ৪টি কুরবানির উপযোগী গরু প্রস্তুত রয়েছে।
এই চরেই মৃত বায়েস আলী প্রামাণিকের ছেলে সাইদুল প্রামাণিক জানান, "যমুনা চরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেশি গরু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব গরু কেবল ঘাস, কুঁড়া ও ভুসি খেয়ে বড় হয়—কোনো ধরনের ফিড বা কেমিকেল ব্যবহার হয় না।" গত বছর ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি ৯ লাখ টাকায় গরু বিক্রি করেন, খরচ হয়েছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। এ বছর তিনি ৬টি গরু প্রস্তুত করেছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলাটিতে এ বছর কুরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার। এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার ৬২০টি পশু। এর মধ্যে গরু ৪ হাজার ৩৮০টি, মহিষ ৮৪০টি, ছাগল ২ হাজার ১৫০টি এবং ভেড়া ২৫০টি। চাহিদার তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১২০টি পশু বেশি রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাওসার হোসাইন বলেন, “যমুনা ও বাঙালি নদী তীরবর্তী এই এলাকায় বিশালাকার চারণভূমি থাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেশি গরু লালন-পালন করা হয়েছে। গরুগুলো পুরোপুরি জৈবিক পদ্ধতিতে পালিত হওয়ায় এগুলোর মাংস স্বাস্থ্যকর এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।”