
প্রিন্ট: ১৫ জুন ২০২৫, ০২:১২ এএম
টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণে ৪০.৫ লাখ ডলারের নতুন প্রকল্প

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০২:১৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আজ ২২ মে, আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। দিবসটিকে ঘিরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাংলাদেশের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি—সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য একটি নতুন ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
‘কমিউনিটি-ভিত্তিক টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এই পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত ১৩ মে, ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর, যৌথভাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর অংশীদারত্বে। এর অর্থায়ন করছে পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)। মোট বাজেট ৪০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা, বন ও জলজ বাসস্থান পুনরুদ্ধার করা এবং বিকল্প, পরিবেশবান্ধব জীবিকা নিশ্চিত করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। তিনি বলেন, “কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন করাই পরিবেশগত স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি। টাঙ্গুয়ার হাওর কেবল সুনামগঞ্জের নয়, এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। স্থানীয় জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সমন্বয়ে এই প্রকল্পটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক মডেল হতে পারে।”
জিইএফ-এর অব্যাহত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, প্রকল্পটি পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জনগণের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার জানান, “টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকল্পটি পূর্ববর্তী সফল প্রকল্পসমূহের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। এটি সরকার, কমিউনিটি, বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ঝুঁকি-বিবেচনামূলক সংরক্ষণ পরিকল্পনার একটি উদাহরণ হবে।”
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পে অর্থনৈতিক মূল্যায়ন, স্কেলযোগ্য প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়ার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জ্ঞান ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান, এই প্রকল্প শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুনামগঞ্জ জেলার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবেন, যেখানে লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
দেড় হাজার হেক্টরের বেশি বন ও জলজ বাসস্থান পুনরুদ্ধার
জীববৈচিত্র্য অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা
মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ ও নারী-সংবেদনশীল এমএসএমই (MSME)-কে সহায়তা
জলাভূমি-ভিত্তিক কৃষি ও মৎস্য চাষে উৎসাহ
দায়িত্বশীল ও টেকসই পর্যটন কার্যক্রমের প্রসার
এছাড়া প্রকল্পে জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ, বায়োডাইভারসিটি ফাইন্যান্স এবং জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কর্মশালায় ১১০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ প্রদান করেন।