
প্রিন্ট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
দিনে ৬ লক্ষ টাকা কর ফাঁকির পথ বন্ধ করলেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১০:১৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল ঘাট এলাকায় অবস্থিত রয়েল টোব্যাকো কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক প্রায় ছয় লাখ টাকা করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদন করে আসছিল। মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে এমন অবৈধ কার্যক্রম চলতে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ সময় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে বিষয়টি গোপন সূত্রে জানার পরই মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা গতকাল সোমবার তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকারাবদ্ধ এ তরুণ প্রশাসক নির্দেশ দেওয়ার পরই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে র্যাব-১১, পুলিশ, আনসার, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং কাস্টমস বিভাগ অংশ নেয়। এ সময় কারখানা থেকে প্রায় ১৪ হাজার প্যাকেট সিগারেট এবং আনুমানিক ২১ লাখ টাকার পুনর্ব্যবহৃত রাজস্ব স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। ডিসির নির্দেশে জব্দকৃত সকল অবৈধ মালামাল তাৎক্ষণিকভাবে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
এ ছাড়া রয়েল টোব্যাকো কোম্পানিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভ্যাট কর্মকর্তাকে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৬২ ধারায় ১৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
র্যাব-১১-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম মোর্শেদ অভিযানের পরে সাংবাদিকদের জানান, কোম্পানিটি বাজার থেকে পুরাতন ব্যবহৃত স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে সেগুলো নতুন সিগারেট প্যাকেটে ব্যবহার করত, যাতে প্রতিদিন সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম জানান, রয়েল টোব্যাকো কোম্পানি ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ৫০ শতাংশ নতুন এবং ৫০ শতাংশ পুরাতন স্ট্যাম্প ব্যবহার করে সিগারেট বাজারজাত করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ২০২৩ সালেও একই অভিযোগে একবার অভিযান চালিয়ে ফ্যাক্টরিটি সিলগালা করা হয়েছিল। তবে মাত্র সাত দিনের মাথায় তারা আবার কার্যক্রম শুরু করে, অভিযোগ রয়েছে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহযোগিতায়।
ডিসি জাহিদুল ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে কর ফাঁকির কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “দুর্নীতি ও রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করেছি। সে যেই হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রয়েল টোব্যাকো কোম্পানিকে পুনরায় সিলগালা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
এই সাহসী অভিযানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম রুখে দিতে প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।