
প্রিন্ট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪ এএম
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬ নেতার একযোগে পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, দুর্নীতি, জমি দখল এবং নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের ১৬ জন নেতাকর্মী। এদের পাশাপাশি আরও অন্তত ৫০ জন কর্মী আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (১৮ মে) রাতে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, মাহদী হাসান অনিক, রাতুল, এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি আপন, আল-শামস সিয়াম, আল-আমিন, সীমান্ত হোসেন, মোজাহিদ, আল-তানজীল আহসান, জেলা কমিটির সদস্য মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, জুনাইদ ইসলাম সাদিদ, সৃজন সাহ, মাহতাব হোসেন আবির ও সাওম মাহমুদ সিরাজ।
তাদের দাবি, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা সংগঠনের নীতিমালা লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। এসব অনিয়ম সংগঠনের মূল চেতনা ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়ান হাসান অভিযোগ করেন, “জনগণ আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছিল, নেতাদের দুর্নীতির কারণে আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, মামলা-মোকদ্দমা ও মেলায় জুয়ার আসর থেকে চাঁদা আদায়ের মতো কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত।”
জেলা কমিটির সদস্য মাহতাব হোসেন আবির আরও বলেন, “দুই মাস আগে একটি বাণিজ্যমেলায় হাউজি খেলার নামে জুয়া বসিয়ে সেখান থেকে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা বাণিজ্য হয়েছে। এমনকি গত বছরের বন্যায় ত্রাণ হিসেবে তোলা ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।”
পদত্যাগকারীদের দাবি, জেলা ও মহানগরের অনেক শীর্ষ নেতা আন্দোলনের শেষ দিকে এসে জড়িত হয়েছিলেন এবং এখন সেটিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।”
মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, “আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত নই। অভিযোগকারীরা যদি কিছু বলতে চায়, প্রমাণ দিক। এসব অভিযোগের পেছনে হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে।”
এর আগে গত ১৫ মে দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করেন জেলা কমিটির আরেক সদস্য মাহমুদুর রহমান লিওন। এছাড়া চলতি বছরের ৮ মার্চ সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মহানগর কমিটির মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটি বালু মহালে চাঁদাবাজির চেষ্টা এবং সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর গঠিত এই আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি এখন অভ্যন্তরীণ সংকটে টালমাটাল।