
প্রিন্ট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
কোরবানির আগে লবণের দাম বেড়ে বিপাকে চামড়া ব্যবসায়ীরা

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই মুসলিমদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে নাটোরের চকবৈদ্যনাথ মোকাম—যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার বাজার হিসেবে পরিচিত—সেখানে লবণের মূল্যবৃদ্ধি ও গরুর চামড়ায় ভাইরাস আক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চামড়া সংরক্ষণের অপরিহার্য উপাদান লবণের দাম হঠাৎ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। আগে যেখানে ৭০ কেজির লবণের বস্তা মিলতো ৭০০ টাকায়, এখন সেটি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১০ টাকার লবণ কিনতে হচ্ছে ১৫ টাকায়। অথচ এ বছর দেশেই পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিলেও এর সুযোগ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ চামড়া ব্যবসায়ীদের।
চামড়া ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল জানান, লবণের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মৌসুমি পর্যায়ে লবণবিহীন চামড়ার দাম কমে যাবে, যা ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে।
লবণের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে গরুর চামড়ায় ভাইরাস সংক্রমণ। মাত্রাতিরিক্ত ফিড খাওয়ানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এই ভাইরাস দেখা দিচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। লবণজাত করার পর ভাইরাস-আক্রান্ত এসব চামড়া অনেকক্ষেত্রে ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে তা ট্যানারিতে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
চকবৈদ্যনাথ মোকামের আরেক ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ভাইরাসে আক্রান্ত একটি চামড়া ৭০০ টাকা দিয়ে কিনে আনার পর আড়তদার সেটির দাম দেন ৫০-১০০ টাকার বেশি না। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, যারা চামড়া শনাক্তে অভ্যস্ত নন।
তিনি বলেন, ‘‘চামড়ার মান না বুঝে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে ফেলে দিচ্ছেন, পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আড়তদারদের ওপর দোষ চাপান। তাই এবার ঈদকে সামনে রেখে তাদের আগেভাগেই সতর্ক করা প্রয়োজন।’’
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আব্দুল হালিম জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে চাঙ্গা হতে থাকা এই বাজার আবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। লবণের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন এবং সীমান্তপথে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘‘নাটোরের বাজারে দেশের প্রায় অর্ধেক জেলার কাঁচা চামড়া আসে, যার অধিকাংশই আসে কোরবানির ঈদের সময়। এই মৌসুমটাই ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের উচিত এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।’’
বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়ার প্রধান বাজার চীন। পাশাপাশি ভারত ও তুরস্কেও রপ্তানি হয় কিছু পরিমাণ চামড়া। তবে নতুন বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।