
প্রিন্ট: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪৩ এএম
অয়ন ওসমানের বন্ধুর ‘ব্লিস বাইট্স’ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অনুপ্রবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের অভ্যন্তরে যাত্রা শুরু করেছে ‘ব্লিস বাইট্স’ নামের একটি স্ন্যাকস কর্নার। শুনতে নিরীহ মনে হলেও, এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পেছনের পরিচয় ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এই শোরুমের মালিক উচ্ছ্বাস, যার পরিচিতি মূলত অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে। অয়ন ওসমান— যিনি শামীম ওসমানের সন্তান এবং যার নাম গত বছর জুলাই-আগস্টে নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র হাতে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সমালোচিত।
রাস্তায় রক্তপাত, গুলির আওয়াজ আর শঙ্কার ছায়া তখনো নারায়ণগঞ্জের মানুষের স্মৃতিতে স্পষ্ট। সে সময়ের দুঃসহ অভিজ্ঞতা যারা বহন করছে, তাদের প্রশ্ন— আজ সেই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঘনিষ্ঠজন কীভাবে শহরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাবের অভ্যন্তরে ব্যবসা চালানোর সুযোগ পেলেন? এমন প্রশ্ন থেকেই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নীতিনির্ধারকদের অবস্থান নিয়েও উঠেছে নানা গুঞ্জন।
ক্ষমতা, প্রভাব নাকি আত্মসমর্পণ?
নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ঐতিহ্য ও মর্যাদার এক প্রতীক। এর সদস্যদের বড় অংশ সমাজের প্রভাবশালী ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি। তাহলে এমন একটি ক্লাব কীভাবে এমন একজন ব্যবসায়ীকে জায়গা দিতে পারল, যার ঘনিষ্ঠতা বিতর্কিত ক্ষমতাবানদের সঙ্গে? প্রশ্ন উঠেছে— সিদ্ধান্তটি কি ভয়ের ফল, না কি রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন?
স্থানীয় শিক্ষকমহল এবং সচেতন নাগরিকদের অনেকেই এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, “যারা আমাদের সন্তানদের রক্তে ভূমি রঞ্জিত করেছিল, তাদের ঘনিষ্ঠদের আজ যদি ক্লাবের মতো জায়গায় জায়গা করে দেওয়া হয়, তাহলে এর পরিণাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?”
অর্থনৈতিক দাপটের অভিযোগ
‘ব্লিস বাইট্স’-এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অগ্রিম মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে এই প্রতিষ্ঠান অবৈধ অর্থ সাদা করার একটি মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মালিক উচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণিত অপরাধ না থাকে, তাহলে আইনের দৃষ্টিতে তার ব্যবসা চালাতে বাধা নেই। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় নৈতিকতার— জনসেবামূলক ও মর্যাদাবান প্রতিষ্ঠানগুলোর কি শুধু আইন মেনে চললেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? নাকি ন্যায়বোধ, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অতীতের ঘটনাবলির নৈতিক পর্যালোচনাও তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত?
‘ব্লিস বাইট্স’-এর উপস্থিতি কেবল একটি বাণিজ্যিক ঘটনার প্রতীক নয়— এটি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি, সামাজিক শক্তির ভারসাম্য ও মূল্যবোধের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আজ যারা রক্তাক্ত ইতিহাসের অংশীদার, তাদের সঙ্গীদের ক্লাবে স্বাগত জানানো কি একটি সমাজের নৈতিক পরাজয় নয়?
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের এই সিদ্ধান্ত, একদিকে যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ক্ষমতার বাস্তবতা তুলে ধরে, অন্যদিকে তেমনই সমাজের স্মৃতি, প্রতিবাদ ও আত্মমর্যাদার পরীক্ষাও। আমরা কী এত দ্রুত ভুলে যেতে পারি— নাকি এখনো সময় আছে ইতিহাসের পাশে দাঁড়ানোর?