
প্রিন্ট: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪০ এএম
১টা বাজলেই ছুটি বিদ্যালয়, বিরক্ত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দুপুর ২টা ৩৩ মিনিট। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় তখন প্রায় ফাঁকা। শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা, শিক্ষক কক্ষও খালি। কেবল একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জাতীয় পতাকা নামাচ্ছেন। অথচ বিদ্যালয়ের ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টা।
রবিবার (৪ মে) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, এটি প্রতিদিনের চিত্র। এসএসসি পরীক্ষার অজুহাতে প্রতিদিনই বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায় দুপুর ১টার মধ্যে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী অলোক বিশ্বাস বলেন, আজ ২টার দিকে প্রধান শিক্ষক ছুটি দিয়ে চলে গেছেন। পরীক্ষার কারণে প্রতিদিন ১টার মধ্যেই ছুটি হয়ে যাচ্ছে।
অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম জানান, বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। আজ দুই শতাধিক উপস্থিত থাকলেও প্রধান শিক্ষকই ছুটির সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যেও উঠে আসে নিয়ম বহির্ভূত এই ছুটির চিত্র। নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ শুধু ইংরেজি ক্লাসের পর ১টার দিকে ছুটি হয়েছে। প্রতিদিনই এমন হয়। ৪টা পর্যন্ত ক্লাস হলে ভালো হতো। সামনে পরীক্ষা, কিন্তু ক্লাস হয় না বললেই চলে।
অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, প্রতিদিনই ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। কখনো সাড়ে ১০টার দিকেও ছুটি দেওয়া হয়।
অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় গিয়ে দুপুর ১টার মধ্যে ফিরে আসে। শিক্ষকরা এখন আর আগের মতো পড়ান না। দুর্নীতিতেও জড়িত।
স্থানীয় দোকানদার আব্দুর রহিম বলেন, বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক সহ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। নিয়োগ বাণিজ্য, বই বিক্রি, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে টাকা নেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। কিছু বললেই খারাপ ব্যবহার করেন।
সহকারী শিক্ষক আবু খোকনও স্বীকার করেন, প্রতিদিনই একটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। তবে সিদ্ধান্ত প্রধান শিক্ষকের।
প্রধান শিক্ষক মো. নুর উদ্দিন ফোনে এসব অভিযোগের বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দেন এবং জানান, কমিটি পরিবর্তনের পর বিদ্যালয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, এজন্য ছুটি দিয়েছি। পরে কথা বলব। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক সভাপতি জিলাল উদ্দিনের ভাই শহিদুল বলেন, আমরা কাউকে মারধর করিনি। শুধু কাগজ চাইতে গিয়েছিলাম।
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, ৪টার আগে ছুটির নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা আছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
চলমান এই অনিয়ম দ্রুত বন্ধে এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।