
প্রিন্ট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
পাবনায় প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল তৈরির মহোৎসব

পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় ২৫০টি কারখানায় প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল। প্রশাসনের মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে এসব জালের অবাধ ব্যবহারে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় মাছের প্রজাতি এবং জলজ জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শত শত বাড়ি এবং প্রায় আড়াইশ কারখানায় প্রতিদিন কোটি টাকার জাল তৈরি হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব জালের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও এটি যেন এখন খোলা আকাশের নিচেই চলা একটি বৈধ ব্যবসা।
স্থানীয় এক কারখানা মালিক জয়দেব হলদার বলেন, "আমার কারখানায় ২০ জন কর্মী চায়না দুয়ারি জাল তৈরি করছে। আমাদের পক্ষে কাজ চালাতে কোনো সমস্যা হয় না।" তবে এ ব্যবসার বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলেও মালিক সমিতির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
ফরিদপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুজিত কুমার মুন্সি বলেন, "আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। গত সপ্তাহেও ১৬ লাখ টাকার অবৈধ জাল পুড়িয়ে দিয়েছি। তবে জনবল কম থাকায় সব কারখানা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।" তিনি আরও জানান, এসব কারখানার কিছু মালিক আদালতে রিট করায় আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ জাল উৎপাদনের কোনো সুযোগ নেই। ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—অভিযান চালিয়ে এসব কারখানা বন্ধ করা হবে।
বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী, চায়না দুয়ারি জাল তৈরি, সংরক্ষণ, আমদানি-রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ও বহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এই আইন উপেক্ষা করে অবৈধভাবে এসব জাল প্রকাশ্যে তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চায়না দুয়ারি জাল কারেন্ট জালের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। জালের সূক্ষ্ম গিঁটের কারণে এতে একবার মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণী আটকে পড়লে বের হওয়া অসম্ভব। সহজে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় জেলেরা এই জাল ব্যবহার করছেন, যার ফলে দেশীয় মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়ছে।
সচেতন মহল বলছে, পরিবেশ ও জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই এই অবৈধ জাল উৎপাদন বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে অচিরেই দেশীয় মাছের প্রজাতি হারিয়ে যেতে পারে।