
প্রিন্ট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
চাঁদপুরে এক বছরে বিয়ে হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার, বিচ্ছেদ ৮ হাজার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
চাঁদপুর জেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। বিশেষত প্রবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ও পারিবারিক দূরত্বের কারণে নারী-পুরুষ, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়াচ্ছেন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ঘরছাড়া ও বিচ্ছেদ, এবং থানাগুলোতে জমা হচ্ছে অসংখ্য নিখোঁজ ডায়েরি।
গত এক বছরে জেলার ৮ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৬৫টি বিয়ে নিবন্ধিত হলেও তালাক হয়েছে ৭ হাজার ৮৯১টি—গড়ে প্রতিদিন ২১টি। বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীদের পক্ষ থেকেই আবেদন বেশি আসছে। চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ এলাকায় এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ২,৭৫৪টি মামলা বিচারাধীন ছিল, যার মধ্যে ৯৮৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাপ্তি ঘটেছে বিচ্ছেদ দিয়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ঘর ছেড়েছেন, যাদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পরকীয়া, নারী নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা, বাল্যবিবাহ এবং পারিবারিক বন্ধনের অভাব।
ফরিদগঞ্জের বাসিন্দা নাছির পাঠান বলেন, প্রবাসে থাকা স্বামীরা স্ত্রীর একাকীত্বের বিষয়টি অবহেলা করেন, আর সেই সুযোগে টানাপোড়েন শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে অনেকে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় বিচ্ছেদে।
চাঁদপুর পৌর এলাকার আব্দুল জব্বার বলেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে পরিবারের প্রতি মনোযোগ কমছে। দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব সৃষ্টি হলে তা আর টেকে না।
চাঁদপুর কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সুফিয়ান দেওয়ান বলেন, কোর্টের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আইন ভেঙে বিবাহ হচ্ছে। নোটারি বিয়ে বন্ধ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানা মুক্তা জানান, আদালত আপোষে সমাধানের চেষ্টা করলেও প্রায় ৮০ শতাংশ মামলারই শেষ হয় বিচ্ছেদে।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, প্রবাসী পরিবারের জটিলতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব এই সংকটের মূল কারণ। যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, প্রবাসী পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদ ও নিখোঁজের ঘটনা বেশি। সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করলেই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।