
প্রিন্ট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:২১ এএম
আদালতের রায় না মেনে প্রধান শিক্ষকের পদ দখলের অভিযোগ সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে

মো. ফসিয়ার রহমান, পাইকগাছা (খুলনা)
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

আদালতের রায় না মেনে প্রধান শিক্ষকের পদ দখলের অভিযোগ সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ আট বছর ধরে দখলে রেখেছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রানী শীল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী জয়শ্রীর মা।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান অবসর নিলে পদটি শুন্য হয়। এর পর থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রানী শীল ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ ও আদালতের একাধিক রায়ের ভিত্তিতে মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তবুও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
২০১৭ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ১২ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন মনিরুজ্জামান। এরপর নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। কিন্তু দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে অঞ্জলী রানী শীল তার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে বাদী করে আদালতে মামলা করান। কিছুদিন পর বাদী মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
দীর্ঘ সময় দায়িত্ব না পেয়ে মনিরুজ্জামান ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত তার পক্ষে রায় দেন এবং যশোর বোর্ডকে নির্দেশ দেন তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। পরবর্তী সময়ে অঞ্জলী রানী শীল একের পর এক রিভিউ ও আপিল করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এরপরও তিনি সিভিল রিভিউ পিটিশন করে মামলাটি ঝুলিয়ে রেখেছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শওকত হোসেন অভিযোগ করেন, চেয়ার আঁকড়ে থাকতে গিয়ে অঞ্জলী রানী শীল বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার টাকার বেশি খরচ করেছেন।
নিয়োগ বোর্ডের তৎকালীন সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, “বোর্ডের সব সদস্যই মনিরুজ্জামানের পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন। এমনকি ওই সুপারিশপত্রে সহকারী প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রানী শীল নিজেও স্বাক্ষর করেছিলেন।”
এ বিষয়ে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, “একাধিক আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বরং আমাকে হয়রানি করতে বিদ্যালয়ের টাকা খরচ করে মামলা করে চলেছেন তিনি। আমি দ্রুত বিষয়টি মীমাংসায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অঞ্জলী রানী শীল বলেন, “নিয়োগে অস্বচ্ছতা ছিল বলে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তৎকালীন সভাপতি রেজুলেশন করে আমাকে দায়িত্বে বহাল রাখেন।”
স্থানীয়রা বলছেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ নিয়ে এভাবে বছরের পর বছর মামলা-বানিজ্য চলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।