
প্রিন্ট: ১৯ জুন ২০২৫, ০১:৪১ এএম
ফেনীতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ৩৪ কোটির বেশি ব্যয়ে নির্মিত চারটি সেতু অচল

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১১ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ফেনী জেলার সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঁঞা উপজেলার চারটি সেতু সংযোগ সড়ক না থাকায় বছরের পর বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এতে জনসাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে কৃষি পণ্য পরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত এবং বাজারে আসা-যাওয়ায় অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, তিনটি উপজেলাজুড়ে চারটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এখনো সেগুলোর সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি।
মাতুভূঁইয়া-বেকের বাজার সড়কের ছোট ফেনী নদীর ওপর ৬০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যার ব্যয় হয়েছে ৯.২০ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও ৩০ শতাংশ কাজ, বিশেষ করে সংযোগ সড়ক, এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
একই উপজেলার উত্তর জয়লাশকর ও ওমরপুর সংযোগকারী সিলোনিয়া নদীর ওপর ৮১ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করে মেসার্স হক ট্রেডার্স। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনো ৭% কাজ বাকি রয়ে গেছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নে মুহুরী নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মিত হয়েছে, যার নামকরণ করা হয়েছে মাওলানা ওবায়দুল হক সেতু।
এছাড়া সোনাগাজী উপজেলার নওয়াবপুর ও ভোরাবাজার সংযোগকারী কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর একই দৈর্ঘ্য ও ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মিত হয়েছে।
এই দুটি সেতুও সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনো অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
দাগনভূঁঞা উপজেলার মোমারিজপুর এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি মাটি থেকে ১০-১২ ফুট উঁচুতে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই—এমনটাই দেখা গেছে ইউএনবি প্রতিনিধি সরেজমিনে গেলে।
একই অবস্থা উত্তর জয়লাশকরের সিলোনিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ক্ষেত্রেও। নির্মাণ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে, কিন্তু এখনো গাড়ি বা মানুষ চলাচলের কোনো পথ তৈরি হয়নি।
সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সেতুগুলোর অবস্থাও একই—সংযোগ সড়ক না থাকায় সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।
মোমারিজপুর এলাকার বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বলেন, সেতুটি আমাদের উপকারে আসার কথা ছিল, কিন্তু বরং এটা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবে উঠার রাস্তা নেই। আমার দোকান নির্মাণকাজে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, ঠিকাদার পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর আসেননি।
উত্তর জয়লাশকরের আব্দুর রহিম বলেন, সেতু নির্মিত হয়েছে তিন বছরেরও বেশি হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কোনো সড়ক নেই। আমরা চাই দ্রুত এটি চালু করা হোক।
সোনাগাজীর নওয়াবপুর ইউনিয়নের নূর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু জনসাধারণের কোনো উপকারে আসছে না—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি যেন এটি ব্যবহারযোগ্য করা হয়।
এছাড়া নদীভাঙনের কারণে সেতুগুলোর আশপাশে বসবাসকারী মানুষদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি ক্ষতির মুখে পড়ছে।
মোমারিজপুরের ফাতেমা খাতুন ও রহিমা বেগম জানান, নির্মাণকাজের সময় অস্থায়ী বাঁধের কারণে বন্যার পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়েছিল এবং তাদের ঘরের অংশবিশেষ নদীতে ধসে পড়ে। ঠিকাদার ব্লক বসানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দাগনভূঁঞা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইফতেখারুল আলম মন্তব্য করেন, জয়লাশকর ও মোমারিজপুরের সেতুগুলো যেন পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে—মনে হচ্ছে যেন সরকারি অর্থ অপব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জনগণের প্রকৃত উপকার হবে কিনা, তা বিবেচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক জানান, চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির জন্য এখনো ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এই সমস্যাগুলো সমাধান হবে, তিনি বলেন।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু অবকাঠামো প্রস্তুত, সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি আমাদের প্রস্তাব পাঠায় এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ সরবরাহ করে, তাহলে আমরা নিশ্চিত করব যে সেতুগুলো জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হয়।