
প্রিন্ট: ১৭ জুন ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
বজ্রপাত আতঙ্কে হাওরের কৃষকরা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ধান কাটা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বৈশাখের শুরু থেকেই কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা দেখা গেছে। তবে প্রকৃতির চোখরাঙানি যেন কৃষকদের স্বস্তিতে কাজ করতে দিচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন হাওরের কৃষক ও শ্রমজীবীরা।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) জেলার অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, বাজিতপুর ও কটিয়াদী উপজেলায় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দুই কৃষক, এক কিষানি, এক শ্রমিক এবং এক জেলে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিঠামইনের শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান কিষানি ফুলেছা বেগম (৬৫)। এরপর সকাল ১০টার দিকে অষ্টগ্রামের হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজিত দাস (৩৬) ও কলমা হাওরে স্বাধীন মিয়া (১৪) নামে দুই কৃষক প্রাণ হারান।
একইদিন দুপুরে বাজিতপুরের হিলচিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান আব্দুল করিম (৩৭)। বিকেলে কটিয়াদীর মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বিলে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান জেলে মো. শাহজাহান (৪২)।
হাওরের কৃষক মুকুল মিয়া জানান, ভোর থেকে কাজ শুরু করি, কিন্তু বজ্রপাত শুরু হলে কোথায় আশ্রয় নেব—সে চিন্তায় সারাক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
স্থানীয় আইনজীবী শেখ মো. রোকন রেজা বলেন, হাওরের শ্রমজীবী মানুষজন খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। কিন্তু বজ্রপাত শুরু হলে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো নিরাপদ স্থানের অভাব রয়েছে।
কৃষিশ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভয় থাকলেও হাওরে কাজ করতে হয়। কাজ না করলে আয় নেই, আয় না থাকলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই ভাগ্য ভরসা করেই কাজ করি।
অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাওরে বজ্রনিরোধক ছাউনি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
আবহাওয়াবিদদের মতে, হাওরাঞ্চল উন্মুক্ত জলাভূমি হওয়ায় বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা জানান, বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে বজ্রপাত প্রতিরোধে কোনো স্থায়ী প্রকল্প বর্তমানে নেই বলে জানান তিনি।