
প্রিন্ট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৩ এএম
কক্সবাজারে সুগন্ধা পয়েন্টে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ

কক্সবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশমুখে সরকারি জমিতে নির্মিত ‘অবৈধ স্থাপনার’ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানিয়েছেন, ২০০০৩ দাগভুক্ত ৩৯ দশমিক ৭৮ একর জমি ২০১৮ সালে সরকারিভাবে খাস হিসেবে গণ্য হয়। এই দাগের জমি কলাতলী থেকে লাবনী পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো জমি নেই। এর মধ্যে ২ দশমিক ৩ একর জায়গা ১ নম্বর সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত।
সাচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত নামক এক ব্যক্তির করা হাইকোর্টের রিট (নং ১০৬৫৭/২৪) অনুযায়ী এই জমি নিয়ে একটি আদেশ জারি হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে ভূমি অফিস, যার মামলা নং ৩৭২৯/২০২৪। ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেয়, যা সময় শেষে ভূমি অফিস বর্ধিত মেয়াদ চেয়ে ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নতুন আবেদন দাখিল করে।
এদিকে, জমির প্রবেশমুখে ‘এই প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’, ‘মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ দ্বারা নিষেধাজ্ঞা আছে’, ‘সংরক্ষিত এলাকা’, এবং ‘উন্নয়ন কাজ চলিতেছে, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ এমন নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এসবের আড়ালে ঘেরার ভেতরে অবৈধভাবে স্থাপনার কাজ চলছিল।
প্রশাসন পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে ওখানে ইট দিয়ে ৫টি লাইনে প্রায় ১ শতটি কক্ষ। যা দোকানের আদলে তৈরি। যেখানে দুই মুখী কক্ষ তিনটি লাইন এবং একমূখী কক্ষের দু্টি লাইন। একটি একটি আয়তন ৮০ স্কয়ার ফুট। উত্তরে একটি লাইনের কক্ষ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুধু টিন লাগানোর কাজ বাকি আছে। যেখানে ৭-৮ জন লোক কাজ করছেন। টেবিল চেয়ার বসিয়ে একটি অফিসের মত করা হয়েছে। যেখানে কেউ না থাকলেও শ্রমিকরা জানিয়েছেন এটি ওবাইদুল হাসান নামের এক আওয়ামীলীগ নেতার মাকের্ট। ইতোমধ্যে সেখানে ১০০ টি পাকা দোকান ঘর নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। প্রতি দোকান থেকে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৫ লাখ টাকা এবং অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকা দিয়ে দোকানে প্রবেশ করার চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি দোকান থেকে ভাড়া বাবদ নেওয়া হচ্ছে মাসিক ২০ হাজার টাকা।
বিষয়টি নজরে আসার পর রবিবার রাতে তার নেতৃত্বে অভিযানের কথা জানিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, তাদের কাজ বন্ধ করে কাগজপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো সালাহউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। তাঁদেরকে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। কাগজে কোন রকম গড়মিল থাকলে ওই স্থানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কথিত আওয়ামীলীগ নেতা ওবাইদুল হাসান কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়া থাকলেও মহেশখালীর স্থায়ী বসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগ মৎস্যজীবীলীগের সহ সভাপতি হিসেবে জেলা কমিটিতে রয়েছে। তার পিতার নাম মৃত ইউসুফ আলী।
এব্যাপারে ওবাইদুল হাসানের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুব্দে বার্তা পাঠানো হলেও দেননি উত্তর।
এদিকে ২০২৪ সালের ১২ জুন জাল খতিয়ান এবং পরপর দুইবার উপজেলা ভূমি অফিস, সদর, কক্সবাজার এর দুইটি সরকারি নথিপত্র জালিয়াতি করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিলের দায়ে সাচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত, পিতা: মৃত নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত-এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ মো: তানভীর হাসান রেজাউল।
কউক'র ভূমি ব্যবহারের প্রত্যাখ্যানপত্রে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার বি.এস, খতিয়ান নং-৭৯০০, আর.এস, দাগ নং- ৫৪ এবং বি.এস. দাগ নং ২০০০৩/৩০৪৩২ এর জমিতে আবাসিক হোটেল/কটেজ/বাণিজ্যিক বিষয়ক ভূমি ব্যবহারে আপত্তি রয়েছে। ২০২৩ সালের২৮ ডিসেম্বর ঝিলংজা মৌজার বি.এস, খতিয়ান নং-৭৯০০, আর.এস. দাগ নং- ৫৪৬ এবং বি.এস, দাগ নং ২০০০৩/৩০৪৩২ এর জমি আবাসিক হোটেল/কটেজ/বাণিজ্যিক বিষয়ক ভূমি ব্যবহার করার সুযোগ নাই।