Logo
Logo
×

সারাদেশ

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কক্সবাজারে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ এএম

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কক্সবাজারে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার শহরের কলাতলী প্রধান সড়কের সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে টিন দিয়ে ঘেরা বিশাল একটি এলাকা নিয়ে চলছে রহস্যজনক কার্যক্রম। সবুজ রঙের গেইটে বড় করে লেখা, "এই প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। সংরক্ষিত এলাকা, উন্নয়ন কাজ চলমান। অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ।"

সাইনবোর্ডে উল্লেখ আছে, জায়গাটি সংক্রান্ত রিট পিটিশন নং ১০৬৫৭/২৪, যার রিটকারী সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই ঘেরার ভেতরে পুরোদমে নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ দোকানপট্টি।

স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভেতরে ইটের গাঁথুনি দিয়ে পাঁচটি সারিতে প্রায় একশ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে, প্রতিটি কক্ষের আয়তন আনুমানিক ৮০ স্কয়ার ফুট। দুইমুখী ও একমুখী কক্ষের পৃথক লাইন করে এগুলো দোকানের মতো সাজানো হয়েছে। উত্তরের সারির কক্ষগুলো প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে, শুধু টিনের ছাউনির কাজ বাকি।

কাজ করতে থাকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এই অবৈধ স্থাপনার নেপথ্যে রয়েছেন ওবাইদুল হাসান নামের এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়ার বাসিন্দা হলেও আসলে মহেশখালীর স্থায়ী বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সূত্র জানায়, প্রতিটি দোকানের জন্য আগাম ১০ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে — প্রথম কিস্তিতে ৫ লাখ এবং বাকি ৫ লাখ টাকা দোকানে প্রবেশের সময়। পাশাপাশি প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওবাইদুল হাসানের সাথে যোগাযোগের একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে; তিনি ফোন ধরেননি বা ক্ষুদে বার্তার জবাবও দেননি।

কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসের তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট জমিটি ২০১৮ সালে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০৩ নং দাগের অধীনে ২ দশমিক ৩ একর জমি সরকারি খাসজমি হিসেবে নথিভুক্ত। যদিও সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্তের করা রিটের (১০৬৫৭/২৪) ওপর ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকার পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে (আপিল নং ৩৭২৯/২৪)। সরকারের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদেশ স্থগিত করে।

তবে রিটকারী সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্তকে নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তাঁকে কেউ চোখে দেখেননি, এমনকি যাঁরা আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন তাঁর পক্ষে, তাঁরাও তাঁর সঠিক অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে পারেননি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৫ আগস্টের পর প্রথম একদল লোক জায়গাটি দখলের চেষ্টা করে; পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশের সাইনবোর্ড টানিয়ে নতুন করে টিনের ঘেরা ও নির্মাণকাজ শুরু হয়।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন বলেন, "সরকারের আপিলের পর আদালত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন। ফলে জেলা প্রশাসন থেকে আগের সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়। জায়গাটি ইসিএ (প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সেখানে যেকোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ আইনত অপরাধ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, "ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ নির্মাণকাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে।"

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন