নড়াইলে নদী-খালের পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে, তিন ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে এক ফসলিতে
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
নড়াইলে নদী-খালের পানিতে লবণাক্ততার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। ছবি : সংগৃহীত
নড়াইলের নদী-খাল ও জলাশয়ের পানিতে ক্রমেই লবণাক্ততা বাড়ছে, ফলে কৃষকরা আর সেচকাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে চাষাবাদ করতে হচ্ছে, ফলে দ্বিগুণেরও বেশি সেচ খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে জেলার বেশিরভাগ তিন ফসলি জমি এখন এক ফসলিতে পরিণত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
যশোর মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোতাসীম আহম্মেদ জানান, নড়াইলের মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা ও আফরা নদীর পানি বছরের একটি সময়ে লবণাক্ত হয়ে পড়ে। ২০০০ সালের জরিপে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে লবণাক্ততা ধরা পড়লেও ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টরে। সর্বশেষ জরিপের ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ কম থাকলে ও বৃষ্টিপাত কম হলে নদী-খালের পানিতে লবণাক্ততা বাড়ে। সাধারণত সেচ উপযোগী পানিতে লবণের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৭৫ ডি/এস মিটার ধরা হয়, তবে নড়াইলের অনেক নদী-খালে এই মাত্রা বেড়ে ১.৭৫ ডি/এস মিটারে পৌঁছেছে, যা সেচের জন্য অনুপযোগী।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের আয়তন ৯৬৮ বর্গকিলোমিটার এবং এখানকার ৮২ শতাংশ মানুষ কৃষি ও মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। নদী-খালের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ায় কৃষকরা এখন মাটির নিচ থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন, ফলে উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক বেড়েছে।
সদর উপজেলার বাশভিটা গ্রামের কৃষক পবিত্র মজুমদার জানান, আগে নদী-খাল থেকে সহজেই সেচ দিতেন, এখন স্যালোমেশিন ব্যবহার করে ২২ হাজার টাকা সেচ খরচ করতে হয়েছে। একই অভিজ্ঞতার কথা জানান কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক পিকুল শেখও। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে সেচে আগে যেখানে দুই হাজার পাঁচশত টাকা খরচ হতো, এখন তা বেড়ে সাত-আট হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে তিন ফসলি জমিও এখন এক ফসলিতে পরিণত হচ্ছে।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধ্য হয়ে বেশি সার ব্যবহার করছেন, যা আর্থিকভাবে তাদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি জানান, কৃষকদের লবণ সহনশীল ফসলের দিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. জসিম উদ্দীন বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া খালগুলো পুনঃখননের মাধ্যমে মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। তিনি জানান, ধান ছাড়াও গম, ভুট্টা, সূর্যমুখীসহ লবণ সহিঞ্চু বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা এ লক্ষ্যে কাজ করছেন।



