
প্রিন্ট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৫০ এএম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জমি অধিগ্রহণে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা গেছে, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জমির শ্রেণি পরিবর্তনে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে সরকারের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া এক অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রকল্পের অধীনে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে, জমির প্রকৃত শ্রেণির ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে নাল, ভিটি ও ডোবা শ্রেণির জমিকে বাণিজ্যিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার ঘুষ না পেলে প্রকৃত বাণিজ্যিক জমিকেও দেখানো হয়েছে ভিটা বা আবাসিক হিসেবে। এতে প্রকৃত মালিকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটেছে বিপুল পরিমাণে।
অভিযোগে বলা হয়, এই অনিয়মে সরাসরি জড়িত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ। এ ছাড়া প্রকল্প চলাকালীন সময়কার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ও মো. মঞ্জুরুল হাফিজ রাজুর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিষয়টি জেনেও ব্যবস্থা নেননি, বরং ঘুষের একটি অংশ পেয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
জমি শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, ৪(১) ধারায় নোটিস জারির পর কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ, পরিবর্তন বা শ্রেণি পরিবর্তন করা হলে তা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এই প্রকল্পে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় পর প্রকল্প সংশোধন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগে জমির দাগ ও মালিকদের নাম উল্লেখ করে বহু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে ঘুষের বিনিময়ে অনিয়ম করে জমিকে বাণিজ্যিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং অচিরেই বিষয়টি তদন্তে নেওয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত দুদকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প এলাকার সাধারণ মানুষ যাতে অনিয়মগুলো সম্পর্কে জানতে না পারেন, সে জন্য ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবরের তারিখে স্বাক্ষরিত ফিল্ডবুকের কপি ২১ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়, যেটি ছিল আপত্তি দাখিলের শেষ দিন। ফলে কেউ আপত্তি দাখিল করতে পারেননি। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে দুদকের শরণাপন্ন হন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে জেলার তৎকালীন ডিসি মোস্তাইন বিল্লাহের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এমন তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাবেক ডিসি মো. মঞ্জুরুল হাফিজ রাজু বলেন, আমি থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জে অনেক উন্নয়নকাজ চলছিল। আমার বিষয়টি মনে নেই। দুদকে অভিযোগ জমা পড়লে তারা বিষয়টি দেখবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উল্লেখ্য, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিনিময়ে কেবল ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানও ঘুষ দিয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বরপা মৌজার ৫৯৪ দাগের নাল জমিকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বাণিজ্যিক দেখিয়ে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।
এই দুর্নীতির জের ধরে সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আস্থায় চরম আঘাত এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন নজর রয়েছে, দুদক কীভাবে এবং কত দ্রুত কার্যকর তদন্ত চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।