
প্রিন্ট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩০ এএম

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৫২ পিএম

পলি জমে ভোলা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় কমে গেছে পানিপ্রবাহ। জোয়ারের সময় পানি প্রবেশ করলেও ভাটার সময় পানিশূন্য হয় নদী। ছবি : সংগৃহীত
সুন্দরবনে নদ-নদী ও খাল জালের মতো বিস্তৃত হলেও অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির অভাবে ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে, সম্প্রতি শাপলার বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩ কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পাইপলাইন বসিয়ে পানি আনতে হয়েছে, যা জোয়ারের সময় পাওয়া গেলেও ভাটার সময় বন্ধ ছিল।
দীর্ঘদিন পুনঃখনন না করায় সুন্দরবনের অনেক নদী ও খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে, ফলে জোয়ারেও পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে পারে না। এই সংকট মোকাবিলায় বন অধিদপ্তর সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বড় পুকুর খনন এবং ভোলা, খড়মা, আড়ুয়ারবেরসহ বিভিন্ন নদী-খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, পানির প্রবাহ বাড়ানো হলে শুধু অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করবে না, বরং বন্যপ্রাণীর পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বনসংলগ্ন গ্রামবাসীর অনুপ্রবেশও কমবে। নদীর উঁচু পার নিচু করে জোয়ারের পানি সহজে বনভূমিতে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার জানান, সুন্দরবনের শাপলার বিল এলাকায় রবিবার দুপুরে জ্বলতে দেখা আগুন নেভানোর কাজে ৮টি ফায়ার স্টেশন, বন বিভাগ এবং স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে পাইপ লাইন স্থাপন করে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। শুধুমাত্র জোয়ারের সময় ভোলা নদীতে পানি পাওয়া গেছে। ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ রাখতে হয়। পুনরায় জোয়ারের পানির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভোলা নদীতে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেলে একদিনের মধ্যে আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভানো যেত।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ওই এলাকার কাছাকাছি পানির উৎস নেই। একারণে ৩ কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে আগুনে ছিটানো হয়। শুধুমাত্র জোয়ারের সময় পানি মিলেছে ভোলা নদীতে। পানির অভাবে ভাটার সময় আগুনে পানি ছিটানো যায়নি। সার্বক্ষণিক পানি থাকলে অনেক আগেই আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভানো সম্ভব হতো।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, সুন্দরবনের ভোলা, আড়ুয়ারবের এবং খড়মা নদীসহ বিভিন্ন নদী-খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে আছে। এ কারণে নদী-খালে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ভাটার সময় নদী-খালে পানি না থাকায় বনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ অবৈধভাবে অহরহ সুন্দরবনে প্রবেশ করছে। সেই সঙ্গে আইনভঙ্গ করে মানুষ তাদের গবাদি পশু সুন্দরবনে বিচরণ করাচ্ছে। নদী-খালে পানি প্রবাহ থাকলে মানুষ এবং গবাদি পশু এইভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না।
বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন পিসি বারুইখালী গ্রামের ধানসাগর টহল ফাঁড়ি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের লিডার লুৎফর রহমান জানান, সুন্দরবনের শাপলার বিলে জ্বলতে থাকা আগুন নেভানোর কাজে অন্যদের সঙ্গে সে নিজেও অংশ নিয়েছে। ভোলা নদীর জোয়ারের পানি আগুন নেভানোর একমাত্র ভরসা ছিল। জোয়ারের সময় আগুনে পানি দিতে পারলেও ভাটায় সময় নদীতে পানি না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ ছিল। নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ যত্রতত্র সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কেউ কেউ তাদের জ্বালানি কাঠ সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করে। দ্রুত নদী-খাল খনন করার দাবি জানান লুৎফর রহমান।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে শাপলার বিল এলাকার কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভানোর কাজে বেগ পেতে হয়। একারণে সুন্দরবনের মধ্যে পানির উৎস তৈরি করতে ফাঁকা স্থানে বড় বড় পুকুর খননের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে পানি প্রবাহ বাড়াতে সুন্দরবনের ভোলা, খড়মা ও আড়ুয়ারবের নদী এবং খাল পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জোয়ারের পানি যাতে সহজে বনভূমিতে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্য নদীর উঁচু পার নিচু করা হবে। সুন্দরবনের মধ্যে পানির উৎস সৃষ্টি এবং পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা গেলে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী তাদের পানির চাহিদা মেটাতে পারবে।