বাজেট সংকটে থমকে আছে গল্লামারী সেতুর নির্মাণ কাজ, জনদুর্ভোগ চরমে

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১০ এএম

ছবি : সংগৃহীত
খুলনার গল্লামারী স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু থেকেই ধীরগতিতে চলছিল এবং নানা কারণে এক পর্যায়ে পুরোপুরি থমকে যায়। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)-এর প্রযুক্তিগত মতানৈক্য, প্রকল্পের বাজেটের তারতম্য, এবং ভেরিয়েশনের (পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী অতিরিক্ত কাজ) ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকার সুরাহা না হওয়া।
সেতুর নির্মাণকাজ থমকে যাওয়ায় খুলনার অন্যতম ব্যস্ত সড়কটির এক পাশ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে অপর পাশে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রতিদিনের যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তথ্যানুযায়ী, ১৬ মাসের মধ্যে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা জাতীয় মহাসড়কের ময়ূর নদীর ওপর নির্মিতব্য দুই লেনের স্টিল আর্চ ব্রিজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর। নির্মাণকাজ শুরু হয় ৮ অক্টোবর, এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এটি ২০২৫ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে বিলম্বের কারণে ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া, সওজের সেতু নকশা বিভাগের স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ নির্মাণের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় নকশাগত সমস্যার কারণে শুরু থেকেই প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। ব্রিজটির ডিজাইনার ভারতীয় পরামর্শক সন্দ্বীপ গুহানিয়োগী। নকশার কাঠামোগত সঠিকতা নিরূপণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার পরামর্শকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে।
প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী মোট চুক্তিমূল্য ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ধরা হলেও, সংযোগ সড়কসহ দুটি সেতুর কাজ শেষ করতে ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৮২ কোটি টাকা। বিশেষ করে, স্টিলের কাজেই প্রায় ৩৮ কোটি টাকা খরচ পড়ছে, যেখানে অনুমোদিত বাজেট ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস জানান, নির্মাণকাজের ধীরগতির মূল কারণ ছিল নকশার জটিলতা এবং পাইলিং পরীক্ষায় ব্যর্থতা। প্রথমে ৪০ মিটার পাইলিং ডিজাইন করা হলেও পরে এটি ৪৮ মিটার পর্যন্ত বাড়াতে হয়, যার ফলে সময় এবং ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ব্যস্ততম গল্লামারী বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিকল্প সড়ক না থাকার কারণেও কাজ পরিচালনায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, আপাতত সেতুর নিচের কাজ শেষ হয়েছে এবং স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ ফ্যাক্টরিতে চলমান রয়েছে। মার্চ-এপ্রিলে স্টিলের স্ট্রাকচার সরবরাহ শুরু হলে পুনরায় নির্মাণকাজ গতি পাবে। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে এবং তারা এটি পর্যালোচনা করছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তারা সচেষ্ট। চলমান জটিলতা নিরসন হলে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে একটি সেতুর কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজন।