নারায়ণগঞ্জকে ‘সন্ত্রাসের রাজধানী’ বানানো হয়েছিল : জামায়াতের আমির

নারায়ণগঞ্জকে একসময় "সন্ত্রাসের রাজধানী" বানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, "ডিসি-এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান একসময় বলেছিলেন, 'আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন, আমি গোলাম আযমকে হত্যা করব।' আজ সে কোথায়? অহংকার ও দাম্ভিকতা ভালো নয়। সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।"

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দেড় দশক পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াত এত বড় সমাবেশের আয়োজন করে।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, "শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়েও দেশে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। কিন্তু মুক্তিকামী মানুষ এসব ষড়যন্ত্র সহ্য করবে না। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যে ২৬ লাখ কোটি টাকা চুরি-ডাকাতি করে বিদেশে পাচার করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে সেই টাকা ফেরত এনে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা।"

৫৪ বছরের বিভক্তি, জাতীয় ঐক্য কীভাবে সম্ভব? অভিযোগ করে তিনি বলেনন, "গত ৫৪ বছর ধরে জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগই এই বিভক্তির নেপথ্যে। তারা পাহাড়িদের নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে ঘোষণা দিয়েছিল, 'আমরা সবাই বাঙালি।' কিন্তু পাহাড়িরা এর প্রতিবাদ করেছিল। তখন থেকেই বিভক্তির শুরু। এখনো পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যতদিন বিভক্তি থাকবে, ততদিন জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়।"

সংবিধান ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।"

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, "আমরা মানুষের সেবার সুযোগ পেলে প্রথমেই শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনব। শিক্ষার্থীদের এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে তারা বেকার না থাকে। নারীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং কৃষি, শিল্প ও অ্যাগ্রো শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।"

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান। বিশেষ করে, জুলাই আন্দোলনে নিহত রিয়া গোপ, ত্বকী হত্যাকাণ্ড ও সাত খুনের বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তারা।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার। আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জয় কে রায় চৌধুরী।