Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভেঙে যাওয়া সেতু পুনর্নির্মাণ হয়নি ৫ বছরেও, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

Icon

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম

ভেঙে যাওয়া সেতু পুনর্নির্মাণ হয়নি ৫ বছরেও, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

বন্যায় সেতু দেবে গেছে এবং এক দিকের সংযোগ সড়কও বিচ্ছ্ন্ন হয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২০১৯ সালের ভয়াবহ বন্যায় ধসে পড়া দুটি সেতু এখনো পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। ফলে তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সেতুগুলো ধসে পড়ার পর থেকেই পাকা সড়কটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। যানবাহন তো দূরের কথা, অনেক জায়গায় পায়ে হেঁটে চলাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য চলাচল যেন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত পূর্ব পাড়ের মানুষ দুই উপজেলার সঙ্গে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের চুনিয়ার পাড় থেকে উলিপুর আজমের মোড় পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার সড়ক এবং দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের বন্যায় আমতলী ও চুনিয়ার পাড় সেতু দেবে গিয়ে সড়কের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে এ রাস্তায় কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

সেতু ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছিলেন, যা দিয়ে কিছুদিন পায়ে হেঁটে বা বাইসাইকেল নিয়ে পারাপার করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেটিও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যখন একমাত্র চলাচলের পথটিও পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা বা চার চাকার কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না, যা স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিয়েছে।

বিষ্ণু বল্লভ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “সেতু থাকার সময় রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি সহজেই চলাচল করত। কিন্তু এখন আমাদের পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, যা খুবই কষ্টকর।”

উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই। সেতু থাকা অবস্থায় আমরা অনায়াসে স্কুল-কলেজে যেতে পারতাম, কিন্তু সেতু ভেঙে যাওয়ার পর মেয়েরা আর নিরাপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।”

অটোচালক আব্দুল খালেক জানান, “আগে প্রতিদিন অটো চালিয়ে পরিবারের খরচ চালাতাম। কিন্তু সেতু ভেঙে যাওয়ায় আয়-রোজগার একদম বন্ধ হয়ে গেছে।”

আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, “সেতু থাকার সময় বাজার জমজমাট ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতেন। কিন্তু এখন ব্যবসায় ভাটা পড়েছে, আগের মতো বেচাকেনা নেই।”

শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল কাইয়ুম সরকার বলেন, “আমাদের মতো অসহায় মানুষের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াটা আরও বড় দুর্ভোগ। চিকিৎসা নিতে যেতেও প্রচণ্ড কষ্ট হয়।”

তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, “সড়কটি পাকা হওয়ার পর মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর হয়েছিল। কিন্তু সেতু দুটি ভেঙে যাওয়ার ফলে ২০ গ্রামের মানুষ আবারও সেই কষ্টে ফিরে গেছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছি, কিন্তু এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি।”

উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার জানান, “আমতলী ও চুনিয়ার পাড় সেতু দুটি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।”

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভোগান্তির শিকার এই এলাকাবাসীর একটাই দাবি—যত দ্রুত সম্ভব সেতু দুটি পুনর্নির্মাণ করা হোক। স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও বিপর্যস্ত করবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন