মাদারীপুরে মদ্যপ অবস্থায় নারী নিয়ে অশ্লীল নৃত্য, দুই এএসআই ক্লোজড

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

ছবি : সংগৃহীত
মাদারীপুরের রাজৈর থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নারী নিয়ে অশ্লীল নৃত্যের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজৈর উপজেলা যুবলীগের কয়েকজন নেতাও তাদের সঙ্গে ছিলেন, যা পুরো জেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুই এএসআইকে ক্লোজড করা হয়েছে।
রাজৈর থানার দুই এএসআই মো. হাদিবুর রহমান ও স্বপন অধিকারীর চারটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, তারা একটি টিনশেড ঘরে মদ্যপ অবস্থায় একাধিক নারীকে নিয়ে নাচানাচি করছেন। এ সময় সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে গানের তালে তালে উল্লাস করছেন। আবার কখনো যুবলীগের কয়েকজন নেতা নাচে তাল দিচ্ছেন। সেই কক্ষের খাটে বসে নৃত্য উপভোগ করতে দেখা যায় রাজৈর উপজেলা যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনকে।
রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নটাখোলা জগদীসের বাড়ি ও আনন্দপুরের ভবত শের বাড়ির গ্যারেজে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণির বখাটেরা আসর বসান। সেখানে মদ, গাঁজাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকজন পলাতক যুবলীগ নেতা সেখানে অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ পুলিশ সমালোচনার মুখে পড়ে।
রাজৈর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মাসুদ খান বলেন, পুলিশ বাহিনী শৃঙ্খলা মেনে কাজ করে এবং কোনো অবস্থাতেই আইনের বাইরে কিছু করতে পারে না। যদি কোনো সদস্য অন্যায় বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করে, তার দায়ভার পুলিশ বাহিনী নেবে না। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয় এবং তিনি তাদের ক্লোজড করেছেন।
তবে, অভিযুক্ত দুই এএসআই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অভিযুক্ত স্বপন অধিকারী বলেন, তিনি বিন্দাস মানুষ এবং মাঝেমধ্যে একটু আমোদ-ফুর্তি করেন। অনেক সময় আসামি ধরতে নানা কৌশল নিতে হয়। এতে যদি অন্যায় হয়, তাহলে তিনি দোষী। আর অন্যায় না হলে কিছু করার নেই।
অন্যজন, মো. হাদিবুর রহমান বলেন, তার জন্মদিন উপলক্ষে কিছুদিন আগে বন্ধুবান্ধব মিলে একটু আনন্দ-ফুর্তি করেছেন। কিন্তু সেটি ভিডিও করে কে ভাইরাল করলো তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তবে তিনি ভুল স্বীকার করে বলেন, এমন কাজ আর কখনো করবেন না।
যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনের সঙ্গে ওই আসরে মাতলামি করেছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাদিবুর রহমান বলেন, কে বা কারা সেখানে ছিল সেটা তিনি জানেন না। তার বন্ধুরা মিলে এমন আয়োজন করেছিল, তাই সেখানে গিয়েছিলেন। তাছাড়া তাদের শরীরে কোনো ইউনিফর্ম ছিল না। সবারই কম বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার অধিকার আছে।
যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেন পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার পরিবার এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয়।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, পুলিশ বাহিনী শৃঙ্খলা মেনে কাজ করে। ইতোমধ্যে যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনোভাবেই এটি কোনো পুলিশ সদস্য করতে পারে না। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে অচিরেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।