Logo
Logo
×

সারাদেশ

কাজে যোগ দিয়েই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজ ছাত্রের পাশে দাঁড়ালেন মানবিক ডিসি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১২ এএম

কাজে যোগ দিয়েই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজ ছাত্রের পাশে দাঁড়ালেন মানবিক ডিসি

সারা দেশে মানবিক ডিসি পরিচিত মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের দুইদিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জবাসীর নজর কাড়লেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক কলেজ ছাত্রের পাশে দ্রুততার সঙ্গে দাঁড়িয়ে। মুন্সিগঞ্জ জেলার গজাড়িয়া থানার চর ভাউশিয়া গ্রামের কৃষক দিল মুহাম্মাদ তার এক বছরের শিশু সন্তান সোহাগকে রেখে মারা যান। পরে এতিম সোহাগের আশ্রয় হয় নারায়ণগঞ্জে সরকার পরিচালিত এতিমখানা শিশু পরিবারে। সেখানে পড়ালেখা শেষ করে ভর্তি হয় সালে ভর্তি হন মুসলিম নগরকে এম হাই স্কুলে। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন দুরাগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় সোহাগ। চোখের রেটিনা আস্তে আস্তে শুকাতে থাকে। দৃষ্টি শক্তি বিলোপ হওয়ার পথে। দিনে সে মাত্র ২৫ শতাংশ দৃষ্টি শক্তি পায়। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই পুরপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে যায়।

অনেক কষ্টে ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় সরকারী কদম রুসুল কলেজে। ২০২১ সালে এইসএসসি পাশ করে রাজধানীর মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজে সমাজ কর্ম বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। একদিনে চরম দ্রারিদ্রতা অন্যদিকে ক্রমশ দৃষ্টি শক্তি বিলোপ হওয়া তার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাড়ায়।

অনেক আশা নিয়ে প্রথমে ২০২৩ সালে এবং পরে ২০২৪ সালে তৎকালীন নারায়ানগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে একটি এন্ডয়েড ফোনের জন্য। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়। শুধু আশ্বাসই মিলে। কিন্তু কর্মকর্তারা আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সোহাগের জন্য সামান্য একটা এন্ডয়েড ফোন দিয়েও সাহায্য করতে পারেন না।

একপর্যায়ে অনেক দিন ঘোরাঘুরির পরে নারায়নগঞ্জ জেলার তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ মেলে সোহাগের। সোহাগের শিক্ষক মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ডিসি মাহমুদুল হকের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনিও ডিসিকে অনুরোধ করেন সোহাগের পাশে দাঁড়ানোর। অনেক আশাবাদী হয়ে পড়েন সোহাগ। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হয় তাকে।

আজ ডিসি জাহিদুলকে ফোন করে বিস্তারিত জানালে তাকে তৎক্ষণাৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসার অনুরোধ করেন স্বয়ং ডিসি। সারা দেশে ‘মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত জাহিদুল ইসলাম জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মো. সোহাইলকেও আসার নির্দেশ দেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্ধারিত মতবিনিময় সভা শেষ করেই সোহাগের হাতে তুলে দেন তাঁর স্বপ্নের এন্ডয়েড ফোন।

ফোনটি হাতে পেয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে পড়েন এই কলেজ ছাত্র। তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে যেয়ে বলেন, আমি ভাবিনি নতুন ডিসি স্যার গতকাল যোগদান করে আজই আমাকে একটা এন্ডয়েড ফোন কিনে দিবেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে সোহাগ আরও বলেন, আমি এখন আমার যেকোনো বই এন্ডয়েড ফোন দিয়ে ছবি তুলে সেটাকে মোবাইল এপসের মাধ্যমে ভয়েস হিসাবে শুনতে পারব। এতে আমার পড়ালেখা মুকস্থ করা অনেক সহজ হবে। এছাড়া আমার দৈনন্দিন কাজগুলো বিশেষ করে রাতে অনেক সহজ হবে।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মো. সোহাইল এই বিষয়ে বলেন, নতুন ডিসি স্যার যোগাদান করেই নির্দেশ দিয়েছেন যেন প্রতিবন্ধী বিষয়ক কোন কাজ এক দিনের জন্যও পেন্ডিং না থাকে।

প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে দায়িত্বে সামান্য গাফলাতিও সহ্য করা হবে না বলে কঠোরভাবে স্মরণ করে দিয়েছেন ডিসি স্যার

  এই সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা), মো. মাশফাকুর রহমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মো. সাকিব-আল-রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রমুখ।

গত ৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত বছরের ২ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

রাজবাড়ী জেলায় যোগ দিয়েই দ্রুতই জনবান্ধব ডিসি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন জাহিদুল ইসলাম। ডিসি জাহিদুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের একান্ত আস্থার ঠিকানা। তাদের সবার শেষ ভরসার স্থল হয়ে উঠেছিলেন এই জেলা প্রশাসক। রাজবাড়ী জেলার শহীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন যোগ দেওয়ার দুই দিনের মাথায়। আহতদের তার অফিসে ডেকেও তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেন।

দ্রুতই সারা দেশে মানবিক ডিসি হিসাবে পরিচিত লাভ করেন জাহিদুল ইসলাম।

মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত পাওয়া ডিসি জাহিদুল ইসলাম দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাতে নিজে গিয়ে উপহার দেন শীতের কম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার পেঁয়াজ চাষিদের পাশে দাঁড়ান অতি দ্রুততার সঙ্গে। রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন জনবান্ধব এই কর্মকর্তা।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় দৌলতদিয়া এলাকায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লীর শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেও সবার নজড় কাড়েন। সেভ দ্য চিলড্রেনের অর্থায়নে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) নামের একটি বেসরকারি এনজিও পরিচালিত স্কুলের কার্যক্রম ডিসেম্বর মাসে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দাতা সংস্থা। যৌনপল্লীর শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেন সদা তৎপর এই সরকারি কর্মকর্তা।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন