Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাগেরহাটে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে ৮ বাড়িতে আগুন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০০ এএম

বাগেরহাটে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে ৮ বাড়িতে আগুন

ছবি : সংগৃহীত

বাগেরহাটে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজ দলের ৮ জনের বাড়িতে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষ। হামলা-পাল্টা হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বিকেলে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বর ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সর্বশেষ সোমবার রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন।

ওই ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকেলে উভয়পক্ষের লোকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে শতাধিক লোকজন রুহুল মেম্বর ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় রুহুল মেম্বারসহ তার ৮ ভাইয়ের বাড়িঘর।

রাত ৮টায় সরেজমিন ঘুরে কয়েকটি ঘর ও কুটোর পালায় আগুন দেখা যায়। রুহুল মেম্বরসহ তার ৮ ভাইয়ের বসতঘরের সব মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ৬টি মোটরসাইকেল, কয়েকটি ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর জন্য স্থানীয়দের দেওয়া পানি রয়েছে ঘরের মেঝেতে। পুরুষশূন্য বাড়িগুলোতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিলাপ করছেন। বসতঘরের বাইরেও হামলা ও ভাঙচুরের ক্ষত চিহ্ন, আগুন দেওয়া হয়েছে গোয়ালঘর, হাস-মুরগির খোপ ও খড়ের গাদায়। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চিরুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের ব্রিজের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রুহুলের পরিবারের সদস্যরা বলেন, মোস্তাফিজের লোকজন কয়েকদিন ধরে আমাদেরকে মারধরের চেষ্টা করছিল। এর জন্য আমাদের পুরুষরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আর আজকে বাড়ির মধ্যে এসে আমাদের সব শেষ করে দিয়ে গেল।

রুহুল মেম্বরের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চায়। প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে, বাড়িতে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে। এক স্বৈরাচার খেদায়ে দেশে এ কোন স্বৈরাচার আনিছে। সাধারণ মানুষ নিরিবিলি থাকতি পারতিছে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামের লোক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ইমরান, কামরান, মাহবুব, মাসুমসহ স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

রুহুল মেম্বরের ছোট বোন ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার ভাই তালিম ভাইয়ের গ্রুপ করছিল। প্রতিপক্ষরা বাড়িতে হামলা করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরও রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা বলেছি ঘরে শিশুরা আছে, তাও কোনো ছাড় দেয়নি, আগুন দিয়ে দিয়েছে। পুলিশ-আর্মি দাঁড়িয়ে ছিল, আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিল, কোনো সাহায্যই করেনি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আগের দিনের ঘটনা নিয়ে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রুহুল মেম্বরের ভাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার শেখ রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সোমবার রাতে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ঢাল-শরকি ও ধারালো দা লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের ৫ নেতাকর্মীকে আহত করে। এ সময় তারা আমাদের ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি অটো গাড়িসহ একটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

মোস্তাফিজুর রহমান গ্রুপের নেতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম মোল্লা বলেন, সোমবার রাতে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল নিয়ে আজ দুপুরে থানায় যাচ্ছিল আমার ভাই মামুন মোল্লা। তখন রুহুল মেম্বরের লোকজন তার ওপর হামলা করে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলাম। এরই মধ্যে বিকেলে আমার আরেক ভাই মাহমুদ মোল্লাকে কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায় প্রতিপক্ষরা। সন্ধ্যার দিকে তারা ঢাল-শরকি নিয়ে আবারও বের হয়, তখন পুলিশও ছিল। এ সময় আমাদের লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে, পরে তারা নিজেরা বাড়িতে আগুন দেয়।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। গেল পরশুও মারামারি হয়েছে। এর জেরেই আজ দুই পক্ষ আবার মারামারি করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন