Logo
Logo
×

সারাদেশ

কাঁদছে খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম

কাঁদছে খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা

ভোরের আলো ফোটার আগেই যেন থমকে গেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ির সময়। যে মজুমদার বাড়িতে প্রতিদিন সকালের শুরু হতো কোলাহল আর ব্যস্ততায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে সেখানে নেমে এসেছে গভীর নীরবতা।

এখন শুধু শূন্যতা আর হাহাকার। উঠানজুড়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর কান্নার শব্দ। চোখের পানিতে ভিজে গেছে প্রতিটি মুখ। মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরআন খতম ও আর দোয়া দরুদ পড়ছেন লোকজন।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বেগম খালেদা জিয়ার বাবার বাড়ি ফেনী ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে শ্রীপুর গ্রামের কৃতী সন্তান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে মুহূর্তেই বদলে দিয়েছে পুরো বাড়ির চিত্র। খবরটি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মজুমদার বাড়ির উঠানে বসে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। কেউ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছেন শূন্যের দিকে, কেউ আবার মাথায় হাত দিয়ে বিলাপ করছেন। বাড়ির দেয়ালে টাঙানো খালেদা জিয়ার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছেন স্বজনরা। ছবিটির দিকে তাকালে যেন মনে হয়, এই তো তিনি কথা বলবেন, খোঁজ নেবেন, পরিবারের সবার নাম ধরে ডাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম— আজ আর সেই ডাক শোনা যাবে না।

খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামিম মজুমদার জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও এ পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পর্ক ছিল গভীর আত্মিক বন্ধনে বাঁধা। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো, নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া— এই স্মৃতিগুলোই আজ কান্নায় ভাসছে। দুপুর গড়াতেই মজুমদার বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশী, শুভানুধ্যায়ী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। কারও মুখে কথা নেই, কারও চোখে শুধু জল। উঠানের এক পাশে কোরআন তেলাওয়াত চলছে, অন্য পাশে নীরবে বসে আছেন শোকাহত মানুষগুলো। পুরো পরিবেশজুড়ে এক গভীর বিষণ্নতা।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের কাছে শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন আপন মানুষ। সুখে-দুঃখে সব সময় খোঁজ নিতেন। আজ তিনি চলে যাওয়ায় বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছে।

খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তানজিম হোসেন তাঈম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমরা একজন রাজনীতিবিদকে নয়, একজন মমতাময়ী মানুষকে হারালাম। তিনি আমাদের কাছে একজন মায়ের মতো ছিলেন। দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের আকাশ-বাতাস যেন আজ ভারী হয়ে আছে শোকে।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, আমরা ফেনী তথা বাংলাদেশ একজন অভিভাবককে হারালাম। সকালে ম্যাডামের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠেছে। এক সময় যে মজুমদার বাড়ি ছিল রাজনৈতিক আলোচনা, স্মৃতিচারণ আর প্রাণবন্ত কথোপকথনে মুখর, আজ সেখানে শুধু নিস্তব্ধতা। ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা ছবিগুলো, ফাঁকা চেয়ারগুলো নীরবে সাক্ষ্য দিচ্ছে একজন মানুষ কতটা গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই পরিবারের হৃদয়ের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, প্রিয় নেত্রীর বিদায়ে কাঁদছে শুধু একটি বাড়ি নয়—কাঁদছে দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রাম তথা সারা বিশ্ব। কাঁদছে স্মৃতি, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের সেই সম্পর্ক, যা কখনো মৃত্যুতে মুছে যায় না।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন