হাদী হত্যার প্রকাশ্যে বিচার চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে পাওয়া গেছে চিঠি। সেখানে নাম পরিচয়হীন অজ্ঞাত এক ব্যক্তির চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে পাগলা মসজিদে ১৩টি দানবাক্স খোলা হয়। এতে মিলেছে ৩৫ বস্তা টাকা। পরে মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় এনে গণনা শুরু করা হয়। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও। এসব টাকার সঙ্গে রয়েছে নামে-বেনামে অসংখ্য চিঠি। সেখানে একটি চিঠিতে লেখা-তার মধ্যে একটি চিঠিতে নামপরিচয়হীন একজন লিখেছেন- ‘হাদী হত্যার প্রক্যাশে বিচার চাই।’
৩ মাস ২৭ দিন পর কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়া এসময় বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এমন আরেকটি চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল- ‘ডাইনি হাসিনাকে তার কর্মের শাস্তি না দেখা পর্যন্ত আমাকে বাঁচিয়ে রেখ। আল্লাহ অনেক আলেমকে কষ্ট দিছে। আমার প্রিয় সাঈদিকে অনেক অত্যাচার করছে।’
ওই চিঠিতে আরও লেখেন- ‘হে আল্লাহ আমার প্রিয় বাংলাদেশে একজন ওমর (রা.) মতো শাসক পাঠাও।’
এমন আরেকটি চিরকুটে লেখেন- ‘হে আল্লাহ আপনি আমার স্বামী মো. জসিমকে পাগলা মসজিদের ওসিলাতে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিন। আপনি আমার স্বামীকে হেফাজতে রাখুন। আপনি আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি পাগলা বাবার ওসিলাতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিন, আমিন।
টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জেসমিন আক্তার, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান মারুফ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ আলী হারেছীসহ ঐতিহাসিক জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসার ২২০ ও পাগলা মসজিদের নুরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১২০ জন ছাত্র, ব্যাংকের ১০০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
এর আগে এমন আরেকটি চিরকুটে লেখা, ‘আল্লাহ আমি যেন একটা মানসম্মত নম্বর পাই। একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারি। আমার মাথার সব খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ আমার মা-বাবারে ভালো রাখেন। আমি যেন রফিকুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হতে পারি।’
এর আগে সবশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে রেকর্ড ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, আপনারা জানেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম একটি জায়গা। সকল ধর্মের মানুষ এখানে দান করে থাকেন। তাদের দানের অর্থ দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স করা হবে। যেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদটির নকশা প্রণয়নের কাজ শেষদিকে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, এবার আমরা তিন মাস ২৭ দিন পর দানবাক্স খুলি এবার রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা টাকা গণনার কাজ করছেন।
কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এ মসজিদটির তেরোটি লোহার দান সিন্দুক আছে। প্রতি তিন মাস পর পর দান সিন্দুক খোলা হয়। এবার ৩ মাস ২৭ দিন পর দান সিন্দুক খোলা হয়েছে। এতে মিললো রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার। এছাড়া রয়েছে মনোবাসনা পূর্ণ করতে বিভিন্ন চিরকুট।



