Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে

দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

Icon

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম

দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি অনিয়ম ক্ষমতার অপব্যবহার ও হাসপাতাল স্টাফদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন সর্বপরি দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে কর্মরত থাকার সুবাদে নানা অনিয়মের স্বর্গরাজ্য ও সিন্ডিকেট এর প্রতিকার চেয়ে শতাধিক সিনিয়র স্টাফ নার্স ও কর্মচারীরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরে আরেক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সাধারন কর্মচারীদের।

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে। এ হাসপাতালটিতে প্রায় ২২ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকুরী করে আসছেন প্রধান সহকারী মো. ইউনুছ আলী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বদৌলতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ প্রাপ্ত (নিজ বেতনে) উচ্চমান সহকারী মো. আকতারুজ্জামান। এ দুজন দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে থাকা এবং একই এলাকা হওয়ার সুযোগ নিয়ে তৈরী করেছেন পতিত সরকারের ফ্যাসিস্টদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট। তাদের দাপোটে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্সসহ হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফদের জিম্মি করে রাম রাজত্বের সৃষ্টি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে হুমকী ধামকীতো আছেই সাথে নেমে আসে শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার। অবশেষে কর্মচারীরা অতিষ্ঠ হয়ে অর্ধশতাধিক সিনিয়র স্টাফ নার্স, কর্মচারী সে সাথে স্থানীয় জনগণ ঐ দুই জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এর সুবিচার পাওয়ার আশায় অভিযোগ করে রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালকের কাছে। 

অভিযোগ করে আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সাধারন অভিযোগকারীদের। তিনি অজ্ঞাত কারনে অভিযোগটি ঝুলিয়ে রাখেন দীর্ঘদিন। অভিযোগ রয়েছে সময় ক্ষেপন করে এবং অভিযুক্তদের সঙ্গে তিনি সখ্যতা বৃদ্ধি করেছেন। এ ব্যাপারে দেশের শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশিত হয়। পরে বিভাগীয় পরিচালক অবস্থার বেগতিক দেখে গত ৩ ডিসেম্বর স্মারক নং- পরি:(স্বাস্থ্য)/রংবি/প্রশা:/অভিযোগ তদন্ত/২০২৫-২১৮৬ পত্রে সিভিল সার্জন লালমনিরহাটকে উচ্চমান সহকারী মো. আকতারুজ্জামান ও প্রধান সহকারী ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সমুহের তদন্ত করে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

এ পত্র পেয়ে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম মোট অংকের উৎকোচের বিনিময়ে পরিচালকের নির্দেশিত দুইজন অভিযুক্তের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে কোন কারন ছাড়াই হাসপাতালের স্টোর কিপারের নাম সংযোজন করে ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার স্মারক নং সিএস/লাল/প্রশা:/২০২৫/৫০৩৫/৩ তাং ৮/১২/২৫। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হলে স্টোর কিপারের নাম কর্তন করে একই স্মারকে সংশোধন করে হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়।

আবার শুরু হয়ে যায় নাটকীয়তা। তদন্তকারী প্রধানের নেতৃত্বে গত ১৭ ডিসেম্বর ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম আসেন কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে। শুরু করেন তদন্ত অভিযুক্তদের সামনেই। এক পর্যায় বাঁধার সম্মুখিন হলে অভিযুক্ত দুজনকে বাইরে পাঠান হয়। তদন্ত টিমের সঙ্গে থেকে যান অভিযুক্তদের স্ত্রীরা। একে একে অভিযোগকারীদের নির্দিষ্ট ফরমে মন্তব্য, স্বাক্ষর, মোবাইল নম্বর ও মৌখিক কিছু বিষয় শোনার পর প্রাথমিক অভিযোগে সত্যতা পাওয়ার সাথে সাথে তদন্তকারীর প্রধান লালমনিরহাট সদর স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা ডা: দিপঙ্কর রায়ের নির্দেশে সংগে আসা তার অফিসের ক্যাশিয়ার মুকুল মিয়া নামে এক জনৈক ব্যক্তি ঐ ফরমগুলো শতাধিক ফটোস্ট্যাট করে অভিযুক্ত দুইজনের হাতে তুলে দেন। এ সুযোগে তারা হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারীর ভূয়া নাম স্বাক্ষর ব্যবহার করে ফরম পূরণ করে তাদের হাতে তুলে দিয়ে তদন্তকারীরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

এখানেই শেষ নয় তদন্তকারীর প্রধান অভিযোগকারীদের একে একে লালমনিরহাট ডেকে নিচ্ছেন এবং ভয় দেখিয়ে তদন্ত বাণিজ্য অব্যাহত রাখছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারীদের আশঙ্খা অভিযুক্তরা প্রায় প্রতিদিনই লালমনিরহাটে যাচ্ছেন এবং তাদের দুরসন্ধিমূলক অপতৎপরতার ধারাবাহিকতা তদন্ত কমিটির সাথে অব্যাহত রাখছেন। তারা আরও আশংকা করছেন অভিযুক্তদের অর্থের জোড়ে তদন্ত প্রতিবেদন ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য কুড়িগ্রাম সদরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে প্রায় ২০০ জন কর্মচারী রয়েছে। এদের প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোন বদলি যোগদান চলমান থাকে। এ ক্ষেত্রে ইউনুছ আলী ও আকতারুজ্জামান সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ছাড়পত্র প্রদানে ও যোগদানে প্রকাশ্যে ১০ হাজার টাকা ছাড়া কাজ করেন না। মেডিকেল এসিসটেন্ট ইন্টার্নশিপ এর জন্য প্রত্যেকের কাছে ১০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করেন। এছাড়া ১শ ৫০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের প্রতিমাসে বিল করার নামে ৪শ টাকা, শ্রান্তি বিনোদনের জন্য প্রতিজনের ৪ হাজার টাকা, সাধারণ ছুটিতে গেলে ২শ টাকা, মাতৃত্ব ছুটিতে গেলে ৫ হাজার টাকা, হাসপাতাল কেবিনে ভর্তি ও রশিদ বাবদ গড়মিল দেখিয়ে বিপুল পরিমানে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ নুর নেওয়াজ আহমেদ জানান তদন্ত কমিটি সরকারি বিধি মোতাবেক তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর বাইরে আর কিছু বলতে তিনি রাজি হন নাই। 

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা: আব্দুল হাকিম এর সাথে ০১৭০১২৪৮১৭৯ যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে কোন কিছু বলতে রাজি হননি।

অপরদিকে তদন্তকারী প্রধান ডা: দিপঙ্কর রায়ের সাথে ০১৭১০৮৭০৫৫৫ যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে কোন কিছু বলতে রাজি হননি। তবে অভিযুক্তরা তার কাছে এসেছেন সেটা স্বীকার করেন।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন