কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০২ এএম
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে, বিপদে পড়েছে গবাদিপশুও।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর থেকে হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না। দিনমজুর, নৌকার মাঝি, কৃষিশ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ না থাকায় অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “ভোরে কাজে বের হলে হাত-পা শক্ত হয়ে আসে। কাজ নেই, আয় নেই, কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে—এখন খুব বিপদে আছি।”
চিলমারী উপজেলার নৌবন্দর এলাকার নৌকার মাঝি মো. কাশেম মিয়া বলেন, “নদীতে কুয়াশা এত বেশি যে নৌকা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তিন দিন ধরে কোনো কাজ নেই।”
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, “ঠান্ডায় ছাগল নিয়ে খুব বিপদে আছি, তাই গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছি।”
স্থানীয়রা জানান, ঠান্ডা বাড়লেও চরাঞ্চলে এখনো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি। অনেক এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, শহরে শীত সহনীয় থাকলেও চরাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখানকার মানুষ দিন এনে দিন খায়, কাজ বন্ধ মানেই না খেয়ে থাকা।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, শীতের কারণে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেড়েছে। শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে গরম কাপড় ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা জরুরি।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় ৫৪ লাখ টাকার ২২ হাজার কম্বল কিনে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।



