Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

Icon

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১৩টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে মিলেছে ৩৫ বস্তা টাকা। সেইসঙ্গে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও। এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে টাকার পরিমাণ।

৩ মাস ২৭ দিন পর শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১০ মিনিটে এ দানবাক্সগুলো খুলে ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার উপস্থিতিতে এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুল হাসান মারুফসহ বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদে দ্বিতীয় তলায় নেয়ার পর সেখান থেকে এবার রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এরপর শুরু হয় গণনার কাজ। এখন চলছে ওই টাকা গণনার কাজ। এই কাজে অংশ নিয়েছে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মাচারীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের একটি দল। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।

এর আগে, গত ৩০ আগস্ট সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া যায়, আর গণনা শেষে তখন রেকর্ড ভেঙে এক অভাবনীয় অঙ্ক—১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল! এ ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে। এবার অনেকেই আশা করছেন দানের পরিমাণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে।

জানা গেছে, প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর এই সিন্দুক খোলা হয়। এবার দীর্ঘ ৩ মাস ২৭ দিন পর খোলা হয়েছে এই সিন্দুকগুলো। সাধারণত প্রতি তিন মাস অন্তর সিন্দুক খোলা হলেও এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতির কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে এই মসজিদে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়। ফলে দিন দিন বাড়ছে দানের পরিমাণ। এ টাকা দিয়ে ছয়তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, টাকাগুলো গুণতে সারাদিন লেগে যেতে পারে। হয়তো সন্ধ্যা বা তার পর জানা যাবে টাকার মোট পরিমাণ। ধারণা করা হচ্ছে, এবার পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে।

জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন।

বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা আছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এতে অর্ধলাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবেন। একইসঙ্গে পাঁচ হাজার মহিলারও আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে টাকা বাড়তেও পারে।

জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানান, মসজিদের দ্বিতীয় তলায় টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। সাধারণত ৩ মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতির কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এবার আশা করা হচ্ছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন