দাউদকান্দি–সাচার–চাঁদপুর সড়ক মরণফাঁদ, এক বছরে ৮০ দুর্ঘটনা
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪১ এএম
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ থেকে চাঁদপুরের সাচার–কচুয়া হয়ে সদর পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার সড়কে চলতি বছরেই ঘটেছে ৮০টির বেশি দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৬০০–এর বেশি মানুষ। অর্ধশতাধিক তীক্ষ্ণ বাঁক, সড়কের ওপর গড়ে ওঠা বাজার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবকে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কম সময়ে কুমিল্লা ও রাজধানী ঢাকা পৌঁছাতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, চাঁদপুর, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করছেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, কচুয়া, মতলব দক্ষিণ এবং দাউদকান্দি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হলেও প্রতিদিনই যাত্রী ও চালকদের চলাচল করতে হচ্ছে চরম ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁদপুর থেকে ঢাকায় দ্রুত পৌঁছানোর সুবিধায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার ছোট-বড় যানবাহন এই সড়কে চলাচল করে। পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে অন্তত ৫০টির বেশি তীক্ষ্ণ বাঁক এবং প্রায় ২০টি বাজার। এসব বাঁকের কারণে অনেক স্থানে বিপরীত দিকের যানবাহন দেখা যায় না। ফলে চালকদের হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা প্রায়ই সংঘর্ষ, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়া এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমিরাবাদ, শায়েস্তানগর, হাটখোলা, পিপিয়াকান্দি, বায়েক, দোঘোর থেকে সাচার–কচুয়া পর্যন্ত একাধিক বাঁক এতটাই তীক্ষ্ণ যে সামনের দৃশ্য সম্পূর্ণ আড়াল হয়ে যায়। দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁকগুলোর মধ্যে রয়েছে সাচার বাজারে ৪টি, বাড়ীপাড়ায় ১১টি, আমিরাবাদে ৫টি, হাটখোলায় ১২টি, বায়েক মোড়ে ১১টি, শায়েস্তানগর ব্রিজের ৩০ মিটারের মধ্যে ৩টি, দোঘোরে ১টি, পিপিয়াকান্দিতে ৮টি ও নারিকেল তলায় ৪টি বাঁক। এসব এলাকায় নিয়মিত দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
ট্রাকচালক মজিব মিয়া বলেন, দাউদকান্দি থেকে সাচার–কচুয়া হয়ে চাঁদপুর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একই সঙ্গে ভয়ংকর। অতিরিক্ত বাঁক আর বাজারের কারণে সতর্ক থেকেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না।
সুরমা পরিবহনের চালক আবদুল খলিল মিয়া বলেন, সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। চোখের সামনে গাড়ি উল্টে যেতে দেখি। প্রাণহানি হলেও কার্যকর কোনো সমাধান চোখে পড়ছে না।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দাউদকান্দি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন জানান, অধিকাংশ বাঁকে সামনের দৃশ্য স্পষ্ট নয়। বড় যানবাহনের চালকরা গাড়ি সামলাতে হিমশিম খান। তার ওপর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকায় ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
নিসচার তথ্যমতে জানা গেছে, চলতি বছরে এই সড়কে ৮০ থেকে ৯০টি দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন নিহত এবং প্রায় ৬৫০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অবগত থাকলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে প্রাথমিকভাবে সিগন্যাল ও সতর্কতামূলক চিহ্ন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাঁক সরলীকরণ ব্যয়বহুল ও জটিল হওয়ায় সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া প্রয়োজন হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলার অন্যতম দুর্ঘটনাপ্রবণ এই সড়ককে নিরাপদ করতে দ্রুত বাঁক সরলীকরণ, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিয়মিত যাত্রীরা।



