বিদ্যুৎ লাইনের নামে নওগাঁর সড়কজুড়ে তালগাছ নিধন, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২০ এএম
নওগাঁ বাইপাস সড়কের দুই পাশে একসময় ছিল সারি-সারি তালগাছ। প্রায় দুই যুগ আগে সড়ক নির্মাণের পর সান্তাহার-ঢাকা রোড থেকে মশরপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় গাছগুলো রোপণ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সড়কের এক পাশের প্রায় সব তালগাছের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের নিরাপত্তার অজুহাতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)–এর কর্মীরা এসব গাছে কুঠার চালিয়েছে।
একই চিত্র নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের সতীহাট বাজার থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাতেও। স্থানীয়দের অভিযোগ, পল্লিবিদ্যুতের কর্মীরা বছরে দুই থেকে তিনবার এসে গাছের মাথা ও ডাল কেটে দেন। এতে উঠতি গাছগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা, আর বিব্রত সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাইপাস সড়কের দুই পাশে ২০ থেকে ২৫ ফুট উঁচু হাজার হাজার তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে। সড়কের দক্ষিণ পাশে গাছের গা ঘেঁষে বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়েছে। তারের সুরক্ষার নামে ওই পাশের গাছগুলোর ডাল ও মাথা কেটে দেওয়া হয়েছে। আগে যেসব গাছের ডাল কাটা হয়েছিল, সেগুলোর অনেকগুলোই ইতোমধ্যে মারা গেছে এবং মরা গাছগুলো এখনো সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতোয়ার রহমান বলেন, ২০০২ সালে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পর স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমীরা তালের বীজ সংগ্রহ করে এসব গাছ রোপণ করেছিলেন। তালগাছের কারণে সড়কের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছিল, তেমনি পরিবেশও উপকৃত হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিভাগের ডাল ছাঁটাইয়ের কারণে এখন গাছগুলো ধীরে ধীরে মরছে, অথচ সেগুলো রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই।
জগৎসিংহপুর গ্রামের ময়েন উদ্দিন বলেন, রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় দক্ষিণ পাশের অন্তত সাড়ে সাতশ তালগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবাদ করলে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন উল্টো আইনি হয়রানির হুমকি দেয়। তার মতে, খুঁটিগুলো ৪–৫ ফুট দূরে সরিয়ে নিলেই গাছগুলো রক্ষা করা যেত।
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার পর দুই পাশে লাগানো বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছগুলো বড় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সতীহাট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের পূর্বপাশে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় রেখে সব গাছের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে একপাশ সবুজ থাকলেও অন্যপাশ খাঁখাঁ করছে, যাত্রীদের ছায়ার সুযোগও কমে গেছে।
সতীহাট বাজারের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন, গাছের মধ্যেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানো নিয়ে আপত্তি জানানো হলেও পল্লিবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছে। গাছ ছাঁটাইয়ের সময় প্রতিবাদ করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বিচারে সড়কের পাশের গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এসব গাছ নষ্ট হলে মানুষের জীবনও ঝুঁকিতে পড়বে।
এ বিষয়ে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫ লঙ্ঘন করে সড়কের পাশের গাছ কাটা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো অনুমতিও নেয়নি। বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে নেসকোর নওগাঁ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিমুল হক দাবি করেন, বিদ্যুৎ লাইন বসানোর পরই গাছগুলো লাগানো হয়েছে এবং নিয়ম মেনেই ডাল ও মাথা ছাঁটা হয়েছে। তার মতে, এতে গাছের ক্ষতি হলেও সেগুলো মারা যাওয়ার কথা নয়।



