সুদানে হামলায় নিহত সেনাসদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
সুদানের আবেই শহরে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার জাহাঙ্গীর আলমকে শ্রদ্ধা -ভালোবাসা আর চোখের জলে চিরবিদায় জানালেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে মেস ওয়েটার জাহাঙ্গীর আলমকে বহনকারী সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে। গ্রামের বাড়িতে নামাজের জানাজা শেষে পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় এই বীর সেনানীকে।
ঢাকা থেকে সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এলাকার হাজারো মানুষ। অবশেষে তিনি ফিরলেন কফিনবন্দি লাল হয়ে। আসরের নামাজের পর বাড়ির সামনে ফসলের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জানাজার নামাজ। পরে তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে রবিবার সকালে ঢাকার সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীর আলম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেসওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। তার ব্যক্তিগত নম্বর (সিএস-২২০১০৯)। প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আইএসপিআর জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। এর আগে গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য সুদানে যান। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম মরদেহ গ্রহণ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেঝো। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসে কর্মরত এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে রেখে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আশায় শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। শান্তির দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বিদেশের মাটিতে শহীদদের কাতারে যুক্ত হলেন জাহাঙ্গীর আলম।
নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নিয়াজ মাখদুম, পাকুন্দিয়া সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার আবির আহমেদসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ ছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নিহতের পরিবার-স্বজন ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ওই হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আরও নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন বর্তমানে কেনিয়ার নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আইএসপিআর জানায়, তারা সবাই শঙ্কামুক্ত।



