সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত ড্রোন হামলায় শহীদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তার নিজ গ্রাম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরে তাকে সামরিক মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপম দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার সকালে ঢাকার সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ পাঠানো হবে পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নেওয়া হবে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে। গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
শহীদের মরদেহ ফেরার খবরে তারাকান্দি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের নীরবতা। বাড়িতে অপেক্ষায় রয়েছেন তার তিন বছরের একমাত্র ছেলে ইরফান, স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার, বৃদ্ধ মা পালিমা বেগম ও বাবা হযরত আলী। বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো ইরফান। পুরো গ্রামজুড়ে বইছে শোকের আবহ।
শহীদের বাড়িতে একে একে ছুটে আসছেন স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামবাসী। কেউ জানতে চাইছেন মরদেহ কখন পৌঁছাবে, কেউ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে খোঁজ নিচ্ছেন সর্বশেষ খবর। সহপাঠী, বন্ধু ও পরিচিতজনেরা অপেক্ষায় আছেন জানাজায় অংশ নিতে— শেষবারের মতো প্রিয় জাহাঙ্গীর আলমকে দেখতে।
জাহাঙ্গীর আলম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেস ওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আইএসপিআর জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। এর আগে গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য সুদানে যান।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম মরদেহ গ্রহণ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজো। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসে কর্মরত এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে রেখে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আশায় শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। শান্তির দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বিদেশের মাটিতে শহীদদের কাতারে যুক্ত হলেন জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, ওই হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আরও নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন বর্তমানে কেনিয়ার নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আইএসপিআর জানায়, তারা সবাই শঙ্কামুক্ত।



