Logo
Logo
×

সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জ–৫

বিজয় দিবসে এক নীরব রাজনৈতিক বিস্ফোরণ মোস্তফা করিম

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম

বিজয় দিবসে এক নীরব রাজনৈতিক বিস্ফোরণ মোস্তফা করিম

ছবি : সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবস সাধারণত জাতির আত্মমর্যাদা, ত্যাগ ও সার্বভৌম সিদ্ধান্তের প্রতীক। ঠিক সেই দিনেই নারায়ণগঞ্জ৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা নিছক একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অবমূল্যায়ন করা হবে। সময়, বক্তব্য ও প্রেক্ষাপট মিলিয়ে এটি একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।

তফসিল ঘোষণার মাত্র ছয় দিনের মাথায়, বিজয় দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিনে “আমি মনোনয়ন কিনব না”—এই উচ্চারণ আসলে একটি রাজনৈতিক অস্বীকৃতি। এটি শুধু একটি প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো নয়; এটি দলীয় মনোনয়ন ব্যবস্থার ওপর এক ধরনের নৈতিক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া।

বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিযোগ রয়েছেবড় দলগুলোর মনোনয়ন প্রক্রিয়া আদর্শ বা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নয়, বরং অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মাসুদুজ্জামানের বক্তব্য সেই অভিযোগকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তিনি কার্যত বিএনপির মনোনয়ন গ্রহণ না করে সেই ব্যবস্থাকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন, যা দলটির জন্য স্বস্তিকর কোনো বার্তা নয়।

নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা সংবাদ সম্মেলনে বলা হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি একটি পরিচিত কৌশল। আসল কারণ সম্ভবত আরও গভীরে। মাঠপর্যায়ের রাজনীতি ও জনসংযোগের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেছেনএই নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং বাস্তব ক্ষমতার সমীকরণ ইঙ্গিত করছে জামাত নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় ইসলামি জোটের দিকে। রাজনীতিতে আদর্শের পাশাপাশি বাস্তব শক্তির হিসাবও বিবেচ্য, আর সেই হিসাবেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত।

আরেকটি দিক উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যদি মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বড় কোনো আর্থিক অনিয়ম, ব্যাংক ডিফল্ট মামলা বা মনোনয়নপত্র বাতিলের মতো আইনি জটিলতা না থাকে, তবে ভবিষ্যতে অন্য কোনো রাজনৈতিক জোট থেকে তাঁর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পথচলার বিষয় হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা আলোচনার বাইরে নয়।

বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল, যেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও একজন প্রার্থী মনোনয়ন ধরে রাখার চেষ্টা না করে তা ফিরিয়ে দেন। যেখানে অনেকেই বিপুল অর্থ খরচ করেও মনোনয়ন পান না, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সরে দাঁড়ানো একটি নজিরবিহীন রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত। এটি আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বেশিএটি একটি নৈতিক প্রতিবাদ।

এই ঘটনার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। বিশেষ করে তারেক রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কাঠামোর জন্য এটি একটি অস্বস্তিকর বার্তা বহন করে। দলীয় কর্মী ও সাধারণ ভোটারের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছেরাজনীতিতে প্রবেশের মূল চাবিকাঠি কি এখন আদর্শ, নাকি অর্থ?

রাজনৈতিক প্রবচন আছেনারায়ণগঞ্জ৫ আসনে যে দল জয়ী হয়, সেই দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়। কিন্তু এইবার ব্যতিক্রম দেখা গেল। এখানে ভোটের আগেই একটি রাজনৈতিক শক্তি নৈতিকভাবে পরাজিত হলো। নির্বাচন হওয়ার আগেই যদি প্রার্থী সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন, তবে সেটি শুধু একটি আসনের পরাজয় নয়, বরং একটি সাংগঠনিক ও নৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

মডেল মাসুদের সরে দাঁড়ানো ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিতবিজয় দিবসে দেওয়া এই ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নীরব কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন